বিশ্বশান্তি ও মানব কল্যাণের লক্ষ্যে ২৪ প্রহর ব্যাপী অখন্ড হরিনাম সংকীর্তন অনুষ্ঠিত হলো বীরভূমের উত্তরডাহা গ্রামে

শম্ভুনাথ সেনঃ

বীরভূমের মাটিটাই আলাদা। এই পূণ্যভূমিতে বৈশাখ-চৈত্র এই বারো মাসই গ্রামে গ্রামে নির্ধারিত সুচিতে অনুষ্ঠিত হয় ২৪ প্রহর হরিনাম সংকীর্তন। গ্রামের মানুষজন যোগ দেন এই নাম সংকীর্তন মহাযজ্ঞে। এখন চলছে উৎসবের মাস। বিশ্বশান্তি ও মানব কল্যাণের কামনায় বীরভূমের দুবরাজপুর ব্লকের লোবা গ্রাম পঞ্চায়েতের “উত্তরডাহা গ্রামে ১৬-১৯ অক্টোবর ২৪ প্রহর ব্যাপী হরিনাম সংকীর্তন অনুষ্ঠিত হল। এবার ছিল হরিনাম সংকীর্তন এর ৭৫ বর্ষ পূর্তি উৎসব। ১৫ অক্টোবর ছিল গন্ধ অধিবাস। এদিন দুপুরে এই ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বীরভূম সাংসদ শতাব্দী রায়। উপস্থিত ছিলেন দুবরাজপুর শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ আশ্রমের শীর্ষসেবক স্বামী সত্যশিবানন্দ মহারাজ, বক্রেশ্বর বাসুদেব ইন্টারন্যাশনাল আশ্রমের অচিন্ত্য মহারাজ, বিশিষ্ট সমাজসেবী ভোলানাথ মিত্র, সুধীজন ড. রবিন ঘোষ, দুবরাজপুর পৌরসভার কাউন্সিলর বনমালী ঘোষ প্রমুখ। এবার এই উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ ছিল নদীয়া থেকে মহাপ্রভুর পাদুকা আনয়ন। ১৬ অক্টোবর ধ’গড়িয়া মোড় থেকে ১০৮ টি মাটির কলস নিয়ে মা ও মেয়েরা জলধারা কাঁসর ঘন্টা ও হরিনামের দল সহযোগে শোভাযাত্রায় অংশ নেয়। এই ক’দিন ২৪ প্রহর ব্যাপী চলে অখন্ড হরেকৃষ্ণ নাম। রাত্রে অনুষ্ঠিত হয় পালাগান সংকীর্তন। এলাকার পাঁচ-সাতটি গ্রামের সুধী ভক্তরা ভিড় করে গৌরমন্ডলী ও পালা গান সংকীর্তনের আসরে। আজ ১৯ অক্টোবর ছিল এই অনুষ্ঠানের শেষ দিন। কলকাতার কীর্তনীয়া কৃষ্ণ পাল দুপুরে পরিবেশন করেন কুঞ্জবিলাস পর্ব। সেই সঙ্গে চলে হাজার হাজার নরনারায়ণ সেবা। উল্লেখ্য, এই উত্তরডাহা গ্রামের স্বর্গীয় বহুবল্লভ রানা ১৩৫৫ বঙ্গাব্দে প্রথম এই ২৪ প্রহর নাম সংকীর্তন এর সূচনা করেন। পরবর্তীতে তাঁর পুত্রগণ তারাপদ রানা, গুরুপদ রানা, উমাপদ রানা সমবেত ভাবে চালিয়ে যান গ্রামের এই ২৪ প্রহর নাম যজ্ঞের ধর্মীয় অনুষ্ঠান। বর্তমানে রানা পরিবার সেই পরম্পরা বজায় রেখেছেন। উত্তরসূরিরা এই ২৪ প্রহর ব্যাপী হরিনাম সংকীর্তন, নাম-যজ্ঞের অনুষ্ঠান গ্রামের মানুষের সহযোগিতা নিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন আজও। এই নাম সংকীর্তনকে কেন্দ্র করে বজায় থাকে গ্রামীণ সংহতি। গ্রামের প্রতিটি পরিবারে আসে আত্মীয় পরিজন বন্ধু বান্ধবরা। “ধর্ম” আজও মানুষকে রক্ষা করে। আর এই বিশ্বাসে সমাজ-সংসারের শান্তি ও মঙ্গল কামনায় নাম সংকীর্তনে ব্রতী হন গ্রামীণ মানুষজন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *