তীর্থকুমার পৈতণ্ডীঃ
কার্ত্তিক সংক্রান্তির মুঠ সংক্রান্তি। গ্রাম্য সংস্কৃতির এক বিশেষ দিন এই মুঠ সংক্রান্তি। গ্রামীন ভারতের অর্থনীতির মূল ভিত্তি কৃষি। যুগে যুগে তাই কৃষি দেবতাকে সন্তুষ্ট রাখতে কতই না চেষ্টা। আজও গ্রামবাংলার ঘরে ঘরে ধানের দেবী, ধনের দেবী লক্ষ্মীর আরাধনা হয় ভক্তি সহকারে। খুব সকালে স্নান করে চাষি মাঠে যায় শুভ সময় দেখে। সঙ্গে নিয়ে যায় কাপড়, কাস্তে, সিন্দুর, আতপ, বাতাসা আর হরিতকি। মাঠের ঈশাণ কোণে বড়ান ধানের গোড়ায় সিন্দুর দিয়ে ছড়িয়ে দেওয়া হয় আতপ। দেওয়া হয় বাতাসা হরিতকি। তারপর প্রণাম করে কেটে নেওয়া হয় এক মুঠি ধান। সেই ধান কাপড়ে জড়িয়ে মাথায় করে ঘরে নিয়ে আসে গৃহস্বামী চাষি। গৃহকর্তী দরজায় পা ধুইয়ে দেয়। জলধারা দিয়ে সেই মুঠরুপ লক্ষ্মীকে ধূপ দীপ দেখিয়ে শাঁখ বাজিয়ে ঘরে প্রবেশ করানো হয়। উঠোন ভরে উঠে আলপনায়। বৃষ্টির অভাবে এবার জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় ধান চাষ হয়নি। এমনও চাষি আছে যার একগাছিও ধান পোতা হয়নি। তাদের মুঠলক্ষ্মী আসবে কী করে? ফাঁক থেকে যাবে লক্ষ্মী আরাধনায়। মহঃবাজারের কাপিষ্টা গ্রামের শ্রীদাম ঘোষাল পূজারী ব্রাহ্মণ। চাষের জমি মাত্র কয়েক কাঠা। এবার গ্রামের কোন মাঠেই চাষ হয়নি। দু-একজন ছাড়া কারও ঘরে মুঠ আসবে না। শ্রীদামবাবু সেকথা চিন্তা করে ঘরের ছাদের উপর মাটির টবে কয়েকগাছি ধানের চারা রোপন করেছিলেন। সঠিক পরিচর্যায় সেই ধান গাছ বেড়ে উঠেছে। সোনালী রঙ ধরেছে ধানে। সেই টবের ধান গাছ থেকেই এবার মুঠলক্ষ্মী আনবেন শ্রীদামবাবু। পুজো আরাধনায় অংশ নেবেন গৃহকর্তী দীপ্তি ঘোষাল, মেয়ে রুম্পা তেওয়ারী। মুঠলক্ষ্মীর পুজোয় অংশ নেবে শ্রীদামবাবুর নাতি বালক পুরোহিত গৌরব তেওয়ারী। এ এক ব্যতিক্রমী মুঠলক্ষ্মী ছাড়া আর কি! এবছর ধানের অভাবে পেটের খিদে হয়তো মিটবে না তবু মুঠলক্ষ্মীর আরাধনা করতে পেরে মনের শান্তি তো থাকবে। অনাবৃষ্টির কারণে যখন অনেকের ঘরে এবার মুঠলক্ষ্মীর আরাধনা অনিশ্চিত তখন শ্রীদামবাবুর এই অভিনব প্রচেষ্টা ব্যতিক্রমি বৈকি।