উত্তম মণ্ডলঃ
আজ থেকে প্রায় ছশো বছর আগে সূদুর আফগানিস্তান থেকে বীরভূমের একদা রাজধানী রাজনগরে এসেছিলেন খ্যাতকৃত্য সুফি সাধক মীর তকি ওরফে মীর মহম্মদ হোসেনী চুনুরুদ্দিন। এখানে এসে প্রথম তিনি ওঠেন রাজনগর ছোট বাজারের সদাব্রতধারী পরিবার প্রয়াত চিন্তামনি দত্ত’র পরিবারে। মীর সাহেব এখানে এসে শুরু করেন একটি বিশাল মসজিদ। সে মসজিদ এখনো অবশিষ্ট রয়েছে এখানে। মসজিদ তৈরির সময় প্রতিদিন তিনি শ্রমিকদের একটি করে আসরফি (স্বর্ণমুদ্রা) দিতেন তাদের মজুরি হিসেবে। এক সর্বহারা ফকিরের এ হেন কাজকর্ম দেখে রীতিমতো অবাক হয়ে যান রাজনগরের তদানীন্তন পাঠান রাজা। রাজনগর ছোট বাজার কুশকর্ণী নদীর ধারে এ জায়গায় তখন ছিল বিশাল জলস্রোত। মীর সাহেব নৌকায় চড়ে ঘোরাঘুরি করতেন। এখনো এখানে একটি পুরোনো বটগাছের কোটরে সযত্নে রাখা রয়েছে সেই নৌকোর কাঠ। পরবর্তীকালে এখানেই জীবন্ত সমাধি নেন তিনি। তার পবিত্র মাজার এখন জনসাধারণের কাছে “মীর সাহেবের মাজার” নামে সুপরিচিত হয়ে হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের কাছে এক পরম পবিত্র স্থান। উভয় সম্প্রদায়ের মিলনের সেতু এই মীর সাহেবের মাজারে প্রতি বছর অঘ্রাণ মাসে ধুমধামের সঙ্গে অনুষ্ঠিত হয় নতুন ধানের নবান্ন উৎসব। পূর্বতন চিন্তামণি দত্ত পরিবারের উত্তর পুরুষরা এদিন শীতের সকালে স্নান সেরে মাঠ থেকে নতুন ধানের শিষ তুলে চিঁড়ে তৈরি করে প্রথম নিবেদন করেন মীর সাহেবের উদ্দেশ্যে। এরপর ফাল্গুনে হয় মীর সাহেবের ঊরুস উৎসব। দুটো অনুষ্ঠানেই বসে গ্রামীণ মেলা। এই বিশেষ দুদিন ছাড়াও সারা বছর হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ আসেন তাঁদের পরম প্রিয় মীর সাহেবের পবিত্র মাজারে মানত চড়াতে। মাজারের আশেপাশে আজও অনেক অলৌকিক ঘটনার কথা এলাকার মানুষের মুখে মুখে ফেরে। প্রতি বছরের মতো আজ পয়লা অঘ্রাণ সাড়ম্বরে আয়োজিত হলো মীর সাহেবের নবান্ন উৎসব। হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মানুষের ভিড়ে জমে উঠলো সম্প্রীতির মিলন মেলা।