বীরভূমের “বক্রেশ্বর বাসুদেব মিশনে” সাধক বাসুদেবের ৮১ তম আবির্ভাব তিথি উদযাপন উৎসব

শম্ভুনাথ সেনঃ

বীরভূমের অন্যতম সতীপীঠ “বক্রেশ্বর ধাম”। অনন্ত কাল ধরে বয়ে চলা এমন উষ্ণ প্রস্রবণ রাজ্যে আর কোথাও নেই। শতাধিক নানান দেব- দেবীর মঠ-মন্দিরে সেজে উঠেছে এই শৈবক্ষেত্র। বছরভর হাজার হাজার পুন্যার্থীর আনাগোনা হয় এই সতীপীঠে। ১৯৯২ সালে বক্রেশ্বর মহাশ্মশানের অনতিদূরে গড়ে উঠেছে “বাসুদেব মিশন ইন্টারন্যাশনাল” নামে এই আশ্রমিক প্রতিষ্ঠান। ২ এপ্রিল, ২০২৩ এই আশ্রমে সাধক বাসুদেবের ৮১ তম আবির্ভাব তিথি উৎসব উদযাপন উপলক্ষে সকাল থেকেই শুরু হয় নাম সংকীর্তন, যাগ-যজ্ঞ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ধর্মীয় আলোচনা সভা। আলোচনায় বারবার উঠে আসে বাসুদেব বাবার জীবন বৃত্তান্ত। দুপুরে তাঁর সমাধিস্থলে ভোগ নিবেদন করা হয়, চলে স্মৃতিতর্পণ। স্থানীয় বক্রেশ্বর, ঝাঁপড়তলা, তাঁতিপাড়া, গোহালিয়ারা, মেটেলা এমন সব গ্রাম থেকে হাজির হয় আশ্রমের গুণমুগ্ধ ভক্ত-শিষ্যরা। চলে সাধু-সন্ত, ভক্ত ও নরনারায়ণ সেবা। কিন্তু কে এই সাধক বাসুদেব!?
১৯৪২ সালের এমন এক ২ এপ্রিল বিহারের মুঙ্গের জেলার জামালপুরে চট্টোপাধ্যায় পরিবারে তাঁর জন্ম। মাত্র ৮ বছর বয়সে আধ্যাত্ম শিক্ষার হাতেখড়ি হয়। তখন থেকেই বেরিয়ে পড়েন সত্যের সন্ধানে। একদিকে আধ্যাত্ম সাধনা অন্যদিকে মেধাবী ছাত্রটি পড়াশোনা চালিয়ে যান। রুরকি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে তিনি কৃতিত্বের সঙ্গে ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং এ ডিগ্রি অর্জন করেন। কিন্তু এই পার্থিব প্রাপ্তিতে তাঁর চিত্ত ভরেনি। নেমে পড়েন মহামায়ার সন্ধানে সাধনক্ষেত্রে। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন তীর্থক্ষেত্রে চলে তাঁর নিরন্তর সাধনা! উল্লেখ্য, ১৯৯২ সালের ২৯ জুলাই তিনি অনন্তলোকে বিলীন হন। সাধক বাসুদেবের দেহ সমাধিস্থ করা হয় এই বীরভূমের সতীপীঠ বক্রেশ্বরে। আর তখন থেকেই দেশ-বিদেশের অনরাগী ভক্ত-শিষ্যদের আর্থিক সহায়তায় গড়ে ওঠে “বাসুদেব মিশন ইন্টারন্যাশনাল” নামে এই প্রতিষ্ঠান। স্বামী ভোলানাথ তীর্থানন্দ মহারাজের দায়িত্বে এগিয়ে চলে এই আশ্রম। অবশ্য তিনিও ২০২০ সালের ১০ সেপ্টেম্বর বাসুদেবলোকে বিলীন হন। তাঁর নশ্বর দেহ বক্রেশ্বর মহাশ্মশানে দাহ করা হয়। বর্তমানে ট্রাস্টি বোর্ডের ব্যবস্থাপনায় ভক্ত-শিষ্যদের আর্থিক সহায়তা দানে এই আশ্রম এগিয়ে চলেছে। সম্পাদক পদে রয়েছেন কলকাতার মানুষ উৎপল ভরদ্বাজ, সভাপতি পদে অচিন্ত্য চৈতন্য মহারাজ সহ ভক্ত শিষ্য প্রসাদ দাস, জয়দীপ মজুমদার, রথীন ঘোষাল, দেবাশীষ চৌধুরী এমন সব অনুরাগী শিষ্যদের আর্থিক সহযোগিতা ও ব্যবস্থাপনায় এই আশ্রমের উন্নয়নের নানা প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। বাসুদেব বাবার সমাধিস্থলে নির্মাণ হচ্ছে সমাধি মন্দির। উল্লেখ্য, গত ২০০৮ সালে বাসুদেব বাবার স্বপ্নাদেশে এক বিদেশী ভক্ত শিষ্য ইটালির মিস্টার পাইরাস সাহেব এখানে ১০ ফুট উচ্চতার একটি “শ্বেত প্রবাল শিবলিঙ্গ” প্রতিষ্ঠা করেন। এই শ্বেত প্রবাল শিবলিঙ্গ ইউরোপের ক্রোয়েশিয়া দেশ থেকে জল জাহাজে নিয়ে আসা হয় কলকাতার খিদিরপুর ডকে। সময় লেগেছিল প্রায় চার মাস। সেখান থেকে ১৬ চাকা গাড়ি করে শিবলিঙ্গ আনা হয় বীরভূমের তীর্থক্ষেত্র বক্রেশ্বরে। এই শিবলিঙ্গ দর্শনে বছরভর এখানে ছুটে আসেন বহু ভক্ত-পুণ্যার্থী। এই বাসুদেব মিশনের আগামী পরিকল্পনা নিয়ে একান্তে জানিয়েছেন মিশনের ট্রাস্টি বোর্ডের সম্পাদক উৎপল ভরদ্বাজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এআই শিখুন, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এগিয়ে যান!


এআই কোর্স: ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী, শিক্ষক এবং ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য সম্পূর্ণ গাইড! Zed Age Infotech এর তরফ থেকে প্রথমবার বীরভূম জেলায়! আপনি কি ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী, শিক্ষক নাকি ছাত্র/ছাত্রী? আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) আপনার কাজ এবং লেখাপড়াকে আরও সহজ এবং কার্যকর করতে পারে! Zed Age Infotech এর নতুন এআই কোর্সে যোগ দিন! বিশদ জানতে কল করুন 9474413998 নম্বরে অথবা নাম নথিভুক্ত করতে নীচের লিঙ্কে ক্লিক করুন।

This will close in 120 seconds