সনাতন সৌঃ
জুলাই মাস শেষ হয়ে গেল। আগষ্ট মাসের প্রথম সপ্তাহ চলে এলো। কিন্তু পর্যাপ্ত জলের অভাবে বীরভূম জেলায় বহু জায়গায় এখনো ধান পোঁতা শুরু করা যায় নি। এখনও বহু জমি পতিত পড়ে আছে। আমন ধান চাষ অনিশ্চিত দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে অসেচ এলাকায় চাষীরা দিশেহারা। তাঁদের ভাবনা, এই রকম পরিস্থিতি চলতে থাকলে আগামী দিনে কী খেয়ে পড়ে বাঁচবে। যদিও এখন জেলাতে একটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়েছে। তবে এই নিম্নচাপ কতক্ষণ স্থায়ী থাকবে এটা কেউ নিশ্চিত বলতে পারছে না। জেলাতে এই মুহূর্তে কোনো কোনো অঞ্চলে বিক্ষিত বৃষ্টিও হচ্ছে, আবার কোথাও কোথাও তেমন বৃষ্টি হচ্ছে না। এখন জেলাজুড়ে ঝোড়ো হাওয়া সহ নামমাত্র ঝিরঝিরে বৃষ্টি হচ্ছে। জেলার পশ্চিমাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলে পরিস্থিতি খুবই খারাপ। সেখানে এই সব অঞ্চলে সেচের কোনো ব্যবস্থা নেই। ঝাড়খন্ডেও বৃষ্টি ঘাটতি থাকায় নদীগুলোতে জল নেই বললেই চলে। মশানঞ্জোড় ড্যামে পর্যাপ্ত জল না থাকায় সেচ খালের মাধ্যমেও বীরভূমের একটা বড় অংশের চাষীরা ধান চাষের জন্য প্রয়োজনীয় জল পাচ্ছেন না। কবে নাগাদ একনাগাড়ে ভারি ধরণের জল আদৌ হবে কিনা চাষী মহল নিশ্চিত বলতে পারছে না। তবে ওই অঞ্চলে যেটুকু বৃষ্টি হচ্ছে, সেই জল শুস্ক মাটিতে টেনে নিচ্ছে। এযেন জলন্ত আগুনে অল্প জল ঢাললে যেরূপ দেখা যায়, সেরকম অবস্থা হয়েছে বলে এখনকার পরিস্থিতি।ধান পোঁতা ক্ষেত্রে এ জল তেমন কোনো কাজেই লাগছে না। ধান রোপণের জন্য আরও জলের প্রয়োজন। এখন বৃষ্টি হওয়ার পরই যেধরণের প্রঢন্ড রোদের তাপ বাড়ছে তাতে সেই জল নিমেষের মধ্যে শুকিয়ে যাচ্ছে। এতে ধান রোপণের কাজে দারুন ব্যাহত হচ্ছে। এর জন্য চাষীরা খুবই চিন্তিত। এসব পরিস্থিতি দেখে শুনে এক চাষী বলতে শুরু করল– ‘বৃষ্টির জল না এলে মাঠে।/দুঃখে চাষার জীবন কাটে।/আয়না বৃষ্টি ঝেঁপে ধান দেবো তোকে মেপে। তোরই আশায় চেয়ে আছি,/ বিশ্বাস কর, এ আশা নয় মিছে।/প্রকৃতির এই খামখেয়ালিপনায় আবহাওয়ার গতিবিধি কোনো বোঝা যাচ্ছে না। বৃষ্টির উপর নির্ভরশীল চাষীরা আকাশপানে তাকিয়ে আছেন, কবে ভারি বর্ষা নামবে। পর্যাপ্ত বৃষ্টি নেই। তাই বীরভূম জেলা কৃষি দপ্তর এবছর চাষের গতিবিধি উপর নজর রাখছেন এবং পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে ধান চাষের বিকল্প হিসেবে অন্য শস্য চাষ করার জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন। জেলা কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে যে, বৃষ্টিপাত স্বাভাবিকভাবে জুন-জুলাই মাসে ৪৪৩,৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা ছিল কিন্তু সেই বৃষ্টিপাত হচ্ছে না। এখন পর্যন্ত বৃষ্টিপাত ঘাটতি রয়েছে ৪৩-৫৪ শতাংশ। গত বছর এ সময় বীজতলা তৈরি করা হয়েছিল ৩০,২৯০ হেক্টর জমিতে। এবছর সেখানে বীজতলা তৈরি হয়েছে ২৮,৯৩০ হেক্টর জমিতে। গত বছর এ সময় ধান পোঁতা হয়েছিল ২,,৯২৫ হেক্টর জমিতে। কিন্তু এবছর সেই লক্ষ্যমাত্রা পুরণ হয় নি। তবে জেলার সেচসেবিত ও নীচু এলাকায় ধান পোঁতা হয়েছে। এই সব এলাকায় পাম্প বা সাবমার্সিবল চালিয়ে ধান রোপণের কাজ চলছে বলে জানা গিয়েছে। তবে চাষের খরচ যেহারে বাড়ছে তাতে এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে অসময়ে ধান চাষ করে তেমন লাভবান হবে না বলে কৃষি মহল মনে করছে । সমস্ত কিছু পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে জেলা কৃষি দপ্তর চাষীদের উদ্দেশ্যে জানাচ্ছেন, যেসমস্ত জমিতে আদৌ ধান চাষ করা যাবে না। সেই সমস্ত পতিত জমি ফেলে না রেখে বিকল্প চাষ হিসেবে বাদাম, অড়হর, কলাই, মিলেট ও ভুট্টা চাষ করা দরকার। এই সব চাষ করার ব্যাপারে জেলা কৃষি দপ্তরের উদ্যোগে ইতিমধ্যে সিউড়ী হাটজনবাজারে রাষ্ট্রীয় কৃষি খামারে একটি আলোচনাচক্র অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যে সমস্ত জমিতে জলের অভাবে ধান চাষ করা যাবে না, সেই সমস্ত জমিতে বিকল্প চাষ করা উচিত। এর জন্য প্রান্তিক চাষীদের বিনামূল্যে ডালশস্য বীজ দেওয়া হবে। এবিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানতে এলাকায় কৃষি সহায়ক অফিসে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনীয় বীজ চাষীদের বিতরণ করার জন্য স্থানীয় ব্লক কৃষি সহায়ক অফিসের কর্তব্যরত কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পঞ্চায়েতের কর্তব্যরত কর্মীদের মাধ্যমে ওই সমস্ত বীজ চাষীদের বিতরণ করার কাজ শুরু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। চাষীদের প্রশ্ন — ধান চাষ বিকল্প হিসেবে অন্য শস্য চাষ করে সমস্যা সমাধান হবে কি?
জেলা কৃষি দপ্তরে কর্তব্যরত এক কর্মকর্তা জেলার চাষবাস বিষয়ে সর্বশেষ পরিস্থিতি প্রসঙ্গে তথ্য সম্বলিত রিপোর্ট দিচ্ছেন।