শম্ভুনাথ সেনঃ
পঞ্চপীঠের বীরভূমের মাটিটাই আলাদা। এই পবিত্র পূণ্যভূমিতে বৈশাখ থেকে চৈত্র বছরভর গ্রামে গ্রামে নির্ধারিত সুচিতে অনুষ্ঠিত হয় “২৪ প্রহর ব্যাপী হরিনাম সংকীর্তন”। ধর্মীয় বাতাবরণে গ্রামের মানুষজনের সম্মিলিত সহযোগিতায় টিকে থাকে গ্রামীণ সংহতি। আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা একসঙ্গে মিলিত হন এই নাম সংকীর্তন মহাযজ্ঞে। এখন এই কার্তিকে চলছে উৎসবের মাস। বিশ্বশান্তি ও মানব কল্যাণের কামনায় বীরভূমের দুবরাজপুর ব্লকের লোবা গ্রাম পঞ্চায়েতের “উত্তরডাহা গ্রামে ৩-৬ নভেম্বর ২৪ প্রহর ব্যাপী হরিনাম সংকীর্তন অনুষ্ঠিত হল। এবার ছিল হরিনাম সংকীর্তন এর ৭৬ তম বর্ষ পূর্তি উৎসব। ২ নভেম্বর ছিল গন্ধ অধিবাস। ৩ নভেম্বর খয়রাশোলের চৈতন্যপুর গীতাভবনের স্বামী সত্যানন্দ মহারাজ সংকীর্তন মঞ্চে শ্রীমদ্ভাগবত গীতা পাঠ করেন। এই ক’দিন ২৪ প্রহর ব্যাপী চলে অখন্ড হরেকৃষ্ণ নাম। বিকেলে গৌরমন্ডলী উৎসবে মিলিত হয় গ্রামের মা-মেয়েরাও। খ্যাতনামা কীর্তনীয়া কিশোর পদ্মপলাশ এবং রাধারানী দাস বৈষ্ণবের কন্ঠে অনুষ্ঠিত হয় পালাগান সংকীর্তন। এলাকার সাত-দশটি গ্রামের সুধী ভক্তরা ভিড় করে গৌরমন্ডলী ও পালা গান সংকীর্তনের আসরে। আজ ৬ নভেম্বর ছিল এই অনুষ্ঠানের শেষ দিন। এদিন ধূলোট উৎসব, সেই সঙ্গে চলে হাজার হাজার নরনারায়ণ সেবা। উল্লেখ্য, এই উত্তরডাহা গ্রামের স্বর্গীয় বহুবল্লভ রানা ৭৫ বছর পূর্বে ১৩৫৫ বঙ্গাব্দে প্রথম এই ২৪ প্রহর নাম সংকীর্তনের সূচনা করেন। পরবর্তীতে তাঁর পুত্রগণ তারাপদ রানা, গুরুপদ রানা, উমাপদ রানা সমবেত ভাবে চালিয়ে যান গ্রামের এই ২৪ প্রহর নাম যজ্ঞের ধর্মীয় অনুষ্ঠান। বর্তমানে রানা পরিবার সেই পরম্পরা বজায় রেখেছেন। উত্তরসূরিরা এই ২৪ প্রহর ব্যাপী হরিনাম সংকীর্তন, নাম-যজ্ঞের অনুষ্ঠান গ্রামের মানুষের সহযোগিতা নিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন আজও। এখন এই নাম যজ্ঞের উৎসব সারা গ্রামের উৎসব। গ্রামীণ সংহতি রক্ষায় এই নাম সংকীর্তন এখন সার্বজনীন রূপ পেয়েছে। গ্রামের প্রতিটি পরিবারে আসে আত্মীয় পরিজন বন্ধু বান্ধবরা। “ধর্ম” আজও মানুষকে রক্ষা করে। আর এই বিশ্বাসে সমাজ-সংসারের শান্তি ও মঙ্গল কামনায় নাম সংকীর্তনে ব্রতী হন গ্রামীণ মানুষজন।