
শম্ভুনাথ সেনঃ

বীরভূমে ধর্মাশ্রিত মেলার সংখ্যাই বেশি। তবে রাসপূর্ণিমা উপলক্ষে জেলার বুকে সবচেয়ে বড় মেলা হয় ইলামবাজার ব্লকের পারুই থানার মঙ্গলডিহি গ্রামে। জনশ্রুতি এই মেলা অন্ততঃ সাড়ে চারশো বছরের পুরোনো। শ্রী কৃষ্ণের রাসলীলা উপলক্ষে কার্তিকী পূর্ণিমায় (এবছর এই পূর্ণিমা অগ্রহায়ণ মাসে) শ্যামচাঁদ বলরাম এর বনভোজনে যাওয়া উপলক্ষে বীরভূমের সুবিখ্যাত রাসযাত্রার মেলা আজ ২৭ নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে। ৪ দিনের এই মেলা হলেও মেলা থাকে ৭ দিন। এই মেলায় প্রায় লক্ষ লোকের সমাগম হয়। বিকি কিনির পাশাপাশি সাংস্কৃতিক মঞ্চে চলে নানা অনুষ্ঠান। আজ সন্ধ্যায় মঙ্গলডিহির ছোটো বাড়ির রাধারাণী মদনগোপাল ও বিনোদ রায় এবং বড় বাড়ির শ্যামচাঁদ ও বলরামকে নিয়ে দোলায় চড়িয়ে মূল মন্দির থেকে গ্রামের প্রান্তে মোড়ল পুকুর ও দুলো পুকুর সংলগ্ন বনভোজন তলায় নিয়ে যাওয়া হয়। রাত্রি ন’টায় অনুষ্ঠান শুরু হলেও সারা রাত্রি ব্যপী চলে এই বিগ্রহ মূর্তি নিয়ে শোভাযাত্রা। অনুষ্ঠানের অন্যতম অঙ্গ বাজি পোড়ানো। পুকুরের পাড়ে এই বাজী প্রদর্শনী দেখতে সারা রাত্রি অপেক্ষা করে হাজার হাজার মানুষ। পরে সেখান থেকে পুনরায় বিগ্রহ মূর্তি নিয়ে আসা হয় মূল মন্দিরে। বীরভূমে বৈষ্ণব তীর্থের মেলাগুলির মধ্যে অন্যতম প্রাচীনতম এই “মঙ্গলডিহি রাস মেলা”। তাকানো যাক ইতিহাসের দিকে—-, মঙ্গলডিহির বিখ্যাত পুরুষ শ্রীমৎ পর্ণীগোপাল ঠাকুর ষোড়শ শতকের একজন বিখ্যাত বৈষ্ণব ভক্ত সাধক। কথিত ধ্রুব গোস্বামী নামে এক পরিব্রাজক হরিদ্বার থেকে শ্যামচাঁদ বলরামের বিগ্রহ এখানে রেখে যান। সেই থেকেই চলছে নিত্যসেবা এবং এই রাস মেলা। বর্তমানে এই ঠাকুর বংশ ছোট বাড়ি ও বড় বাড়ি বলে পরিচিত। মঙ্গলডিহি জেলার ধর্মীয় মানচিত্রে এক অন্যতম বৈষ্ণব তীর্থভূমি।

ছোট বাড়ির—রাধারানী মদনগোপাল ও বিনোদ রায়

বড় বাড়ির— শ্যামচাঁদ বলরাম