বিজয়কুমার দাসঃ
বাণিজ্যের শহর সাঁইথিয়ার নানা স্মৃতির সঙ্গে জড়িয়ে আছে সাঁইথিয়ার রেলব্রিজ। শহরের মাঝখানে সতীপীঠ নন্দিকেশ্বরীতলার সামনের দিকে অবস্থিত রেলব্রিজটি শহরের পূর্ব পশ্চিমের সংযোগকারী নির্ভরযোগ্য সেতু। নিচে দিয়ে চলে গেছে রেললাইন। একদা শহরের মধ্যরাতে এই সেতুর নিচে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনার সময় একটি বিপর্যস্ত ট্রেনের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল এই রেলব্রিজ। তাকে আবার চলাচলের উপযোগী করে তোলা হয়েছিল মেরামত করে। তবু দিনের পর দিন অশক্ত অথর্ব হয়ে যাওয়া এই রেলব্রিজ ভারি যানবাহনের চলাচলে দুলে উঠত। বারবার সেতু মেরামত যেমন হয়েছে তেমনই এই রেলব্রিজ ভেঙে তাকে আরো প্রশস্ত করার দাবি উঠেছে বারবার। শহরের মানুষের স্বাক্ষর সম্বলিত দাবিপত্র বহুবার পৌঁছেছে রেল দপ্তরে। রেলের কর্মকর্তারা এলেই শহরের নাগরিকরা, পুরসভা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সেতু সংস্কারের দাবি তাঁদের হাতে তুলে দিয়েছে। লালুপ্রসাদ যাদব, মমতা ব্যানার্জী, অধীর চৌধুরী রেলমন্ত্রী থাকাকালেও জট খোলেনি। কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্য সরকার, পুরসভার ত্রয়ী উদ্যোগ ছাড়া সম্ভব ছিল না সংস্কার। নানা কারণেই সেই ত্রিশক্তি এক হতে পারেনি এতদিন। কিন্তু এখন সেই রেলব্রিজ ভেঙে নতুন সেতু তৈরির কাজ শুরু হবে বলে খবর ছড়িয়েছে। সংবাদপত্রে সেই কাজের দরপত্রের বিজ্ঞপ্তি দেখে আশ্বস্ত হয়েছে শহরবাসী। যদিও অতীতে বহুবার টেন্ডার হয়েও থমকে গেছে সংস্কারের কাজ। বারবার রোগীর ক্ষতে ব্যান্ডেজ বাঁধার মত করে এই সেতুর ক্ষত মেরামত হয়েছে। তাতে খুশি হয়নি শহরবাসী। এই ব্রিজের কাছে অবশেষে বছর খানেক আগে বিজ্ঞপ্তির বোর্ড ঝুলিয়ে জানানো হয়েছে, এই সেতু ভারি যান চলাচলের অযোগ্য। তবু অশক্ত ক্ষতবিক্ষত এই রেলব্রিজের বুকের ওপর দিয়েই প্রতিদিন চলে যায় অজস্র যানবাহন, ডাম্পার। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের আর যানবাহনের যাতায়াতে যানজটের কারণ হয়ে উঠেছে এই সেতু। সেই সেতু ভাঙার কাজ নাকি শুরু হচ্ছে অবিলম্বে। নবরূপায়ণের রেলস্টেশন আর বাণিজ্যে বেড়ে ওঠা সাঁইথিয়া শহরে এই রেলব্রিজ আজ সত্যিই বড় বেমানান। এ নিয়ে বহু আন্দোলন হয়েছে।বারবার দাবি উঠেছে সেতু সংস্কারের।
অবশেষে হয়তো সেই সেতু ভাঙ্গা হচ্ছে৷ বিকল্প পথ হিসাবে পুরসভা তৈরি করেছে বিকল্প রাস্তা। যদিও সেই রাস্তা সাঁইথিয়া-আমোদপুর রোডে শহরের বাইরে মিলিত হয়েছে। এসে গেছে ১৫০ টনের দুটি বিশালাকৃতির ক্রেন। এ শহরের অনেক স্মৃতি, অনেক আন্দোলন, অনেক অবস্থান, মিছিল, শোভাযাত্রার সাক্ষী এই রেলব্রিজ ইতিহাস হয়ে যাবে। শহরের তরুণ তরুণীরা তাই প্রতিদিন সেতুতে দাঁড়িয়ে নিজস্বী তুলে সেতুর স্মৃতিকে ধরে রাখতে চাইছে। যদিও শহরের মানুষের মনে নানা প্রশ্ন ঘুরছে। কেমন হবে নতুন সেতু? সময় লাগবে কতদিন? কতটা উঁচু হবে নতুন সেতু?….
রেল প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি অনুসারে জানা যাচ্ছে, ১৯১০ সালে তৈরি হয়েছিল এই সেতু। শতাধিক বছরের সেতুটি ভেঙে নতুন সেতু তৈরির পক্ষে শহরবাসী। তবু কোথাও যেন এই পুরনো সেতুর জন্য মন খারাপ শহরবাসীর। তবে সবার কামনা একটাই : পুরনো সেতু ভেঙ্গে নবরূপায়ণের কাজ যেন বিলম্বিত না হয়।