দেউচা-পাচামি হলে জেলার ১ লক্ষ ছেলেমেয়েদের চাকরি হবে, বীরভূমের সরকারি পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠানে বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

সেখ রিয়াজুদ্দিনঃ

বীরভূম সফরে এসে ১৮ ফেব্রুয়ারি সিউড়ি চাঁদমারি ময়দানে সরকারি পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠানে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী জেলার জন্য একগুচ্ছ প্রকল্পের উদ্বোধন, শিলান্যাস সহ বিভিন্ন পরিষেবা প্রদান করলেন। ৭২৩ কোটি ২০ লক্ষ টাকা খরচ করা হয়েছে এইসব প্রকল্পগুলির জন্য। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শনিবার সন্ধ্যায় বোলপুরে পৌঁছান সেখানে প্রশাসনিক বৈঠকের পর রবিবার দুপুর প্রায় সাড়ে বারোটা নাগাদ হেলিকপ্টারে সিউড়ির চাঁদমারি ময়দানে আসেন। এদিন বিভিন্ন প্রকল্পের পরিষেবা প্রদানের পাশাপাশি ডেওচা পাচামি জমি দাতাদের মধ্যে চাকরির কিছু নিয়োগপত্রও তুলে দেওয়া হয়। লোকপ্রসার, পলু পালনের ঘর নির্মাণ, সমব্যথী, সবুজ সাথী, কন্যাশ্রী, রূপশ্রী প্রভৃতি প্রকল্পের পরিষেবা প্রদান করেন। কৃষক বন্ধু প্রকল্পে মৃত্যুজনিত সহায়তা প্রদান, বার্ধক্য ভাতা, পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যুজনিত সহায়তা প্রদান করলেন। নিজের হাতে ধামসা বাজিয়ে আদিবাসীদের ধামসা মাদল প্রদান করলেন। মিলি কাহার- দেবব্রত মন্ডলের সাথে নতুন করে সংসার পাতবেন, তাকে রূপশ্রী প্রকল্পের পরিষেবা প্রদান, সেক্ষেত্রে নতুন বেনারসি শাড়ি তার গায়ে দিয়ে আশীর্বাদ করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ডেউচা পাচামির জমিদাতাদের মধ্যে ৫৬৩ জনকে ক্ষতিপূরণের চেক বিতরণ। একই সাথে ৩৪২ জনকে জুনিয়র কনস্টেবল এবং ২৩০ জনকে গ্রুপ-ডি পদে চাকরির নিয়োগ পত্র তুলে দিলেন তিনি। এদিন এই মঞ্চ থেকে রাজ্যের তিনটে মেডিকেল কলেজও উদ্বোধন করা হয়। এর মধ্যে তমলুক তাম্রলিপ্ত মেডিকেল কলেজ, আরামবাগ প্রফুল্লচন্দ্র মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং বারাসাত মেডিকেল কলেজ। এছাড়া বোলপুর বিশ্ব বাংলা বিশ্ববিদ্যালয়, যা প্রায় ৩৬৭ কোটি টাকা ব্যয় করে নির্মাণ করা হয়েছে। এটারও উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। জেলায় যেসব উন্নয়নমূলক কাজগুলি হয়েছে সেগুলিও এক এক করে তুলে ধরেন। জেলার অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা ৮৫ কিলোমিটার ৬২টি গ্রামীণ রাস্তা করা হয়েছে, এছাড়া ৬২ টি আদিবাসীদের জাহের থানের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে , ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল নির্মাণ করা হয়েছে, তারাপীঠ, পাথরচাপুরি, বক্রেশ্বর, ফুল্লরা তলা, ভান্ডিরবন, নন্দিকেশ্বর প্রভৃতি ধর্মীয় স্থল গুলোতেও সরকারি পরিষেবা প্রদান করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন আট লক্ষেরও বেশি বাড়িতে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং ইতিমধ্যেই প্রায় তিন লক্ষ দুই হাজারেরও বেশি বাড়িতে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে।
রাজ্যের উন্নয়নে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ভূমিকা তুলে ধরার পাশাপাশি বামফ্রন্ট, বিজেপি এবং কংগ্রেসকেও এক হাত নেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন ৩৪ বছর ধরে বামফ্রন্ট রাজ্যের জন্য কি করেছে? বিজেপি ১৮ টা এমপি জিতিয়ে নিয়ে গিয়ে কি করেছে? ১০০ দিনের কাজের টাকা বন্ধ করেছে। আবাস যোজনার টাকা বন্ধ করেছে । অপরদিকে রাজ্য সরকার ৪৭ হাজার গরীব মানুষের বাড়ি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। চব্বিশ লক্ষ পঞ্চাশ হাজার শ্রমিকদের ১০০ দিনের কাজের টাকা রাজ্য দেবে বলে জানিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।


এনআরসি এবং আধার লিঙ্ক নিয়েও সবাইকে তিনি সাবধান করেন। তিনি বলেন বিভিন্ন জায়গায় আধার লিঙ্ক কেটে দেওয়া হচ্ছে। রাজ্যের অন্যান্য জায়গার পাশাপাশি বীরভূমেও আধার লিঙ্ক কাটা হচ্ছে বলে তার কাছে খবর এসেছে। নির্বাচনের আগে যাতে জনসাধারণ ব্যাংক লোন থেকে লক্ষী ভান্ডারের টাকা না পায়, রেশন ঠিকঠাক না পায়, রাজ্যের অন্যান্য পরিষেবায় যাতে বিঘ্ন ঘটে,সেই জন্যই আধার কার্ড নিয়ে কেন্দ্র এ ধরনের ছলনা করছে। তবে রাজ্য আধার কার্ড ছাড়াই সমস্ত রকম পরিষেবা আগামীতে দেওয়ার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ রয়েছে বলে তীব্র কন্ঠে ঘোষণা করেন। কোন ব্যাংক যদি আধার কার্ড ছাড়া কোন কাজ হবে না বলে দেয়, তাহলে আগামীতে রাজ্যের নিজস্ব ব্যাংক কো-অপারেটিভ ব্যাংকের মাধ্যমে কাজকর্ম করে দেওয়া হবে সাধারণ মানুষদের বলে তিনি আশ্বাস দেন। এনআরসি প্রসঙ্গে বলে এনিয়ে কেন্দ্র আবার কুহু কুহু ডাক শুরু করেছে। এরা কোকিলকেও এখন ডাকতে দিচ্ছে না। কেন্দ্র আর যাই বলুক, এ রাজ্যে এনআরসি কোনমতেই হতে দেবেন না, তা তিনি কেন্দ্রকে হুঁশিয়ারি করে দেন। সিপিএম, বিজেপি কংগ্রেসকেও একহাত নেন। বলেন একসময় সিপিএমের অত্যাচার সহ্য করেছি, আর এখন বিজেপির অত্যাচার সহ্য করতে হচ্ছে। বিজেপি, সিপিএম , কংগ্রেস, এরা রাম, বাম আর শাম। তিন জনে এক হয়ে গেছে।
মিডিয়াকেও তিনি এক হাত নিয়ে বলেন এরা এখন তিলকে তাল করছে। বিজেপি যা বলছে এরা সেটাকে তিল থেকে তাল বানিয়ে প্রচার করছে। এদের সব কথা বিশ্বাস করবেন না। রাজ্যের ছেলেরা যাতে আগামীতে চাকরি-বাকরি পায় সেজন্য জেলায় জেলায় ট্রেনিং সেন্টার করা হচ্ছে , যাতে আই পি এস, এস এ সহ বিভিন্ন আধিকারিক রূপে বাংলার ছেলেরা চাকরি পায়। ডেউচা-পাচামি সম্বন্ধে বলেন ৭৬৮৩ জন কে চাকরিতে ইতিমধ্যে নিয়োগ পত্র দেওয়ার কাজ চলছে। ডেউচা পাঁচামি হলে জেলার এক লক্ষ মানুষের চাকরি হবে। পরিশেষে সবাইকে বলেন বাংলায় এনআরসি হবে না। রাজ্য সরকার তার জন্য সব রকম প্রচেষ্টা চালাবে। এর জন্য কেউ আতঙ্কিত হবেন না। মমতা ব্যানার্জি বলেন আমরা ছিলাম, আছি এবং আগামীতেও থাকবো। অনুব্রত মন্ডলের প্রতি যে এখনো অগাধ আস্থা রয়েছে তা এদিনের মঞ্চ থেকে অনুব্রত মন্ডলের গুনগান করে সকলকে বুঝিয়ে দিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *