বীরভূমের সিউড়ীতে ১৬৯ তম হুল দিবস উদযাপিত হল

শম্ভুনাথ সেনঃ

সারাদেশের সাথে বীরভূমেও উদযাপিত হল ১৬৯ তম “ঐতিহাসিক হুল দিবস”। এবারও মূল অনুষ্ঠানটি হয় জেলা সদর সিউড়ির সিধু কানু মঞ্চে। জেলা আদিবাসী উন্নয়ন দপ্তরের উদ্যোগে এবং বীরভূম জেলা প্রশাসনের পরিচালনায় বীরভূম জেলা সমাহর্তা বিধান রায়,জেলা সভাধিপতি ফায়জুল হক সহ বিশিষ্ট জনেদের হাত ছুঁয়ে অনুষ্ঠানের শুরুতেই প্রদীপ প্রজ্জ্বলিত হয়। সাঁওতাল বিদ্রোহের দুই অবিস্মরনীয় নেতা সিধু,কানুদের মূর্তিতে মাল্যদানের মধ্য দিয়ে এদিন শ্রদ্ধা নিবেদিত হয়। উপস্থিত ছিলেন বীরভূম জেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের বিভিন্ন আধিকারিকরা। উল্লেখ্য, “হুল” শব্দের অর্থ হচ্ছে বিদ্রোহ। আর এই সাঁওতাল বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দের এমন এক ৩০ শে জুন। তৎকালীন ইংরেজ শাসকদের মদতে জোতদার – জমিদাররা অমানবিক অত্যাচার চালায় সাঁওতাল সম্প্রদায়ের মানুষজনদের উপর। একদিকে পরাধীনতার জ্বালা, অন্যদিকে অত্যাচারের ক্ষত শেষ পর্যন্ত জন্ম নেয় বিদ্রোহের। সিধু- কানুর নেতৃত্বে ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে ৩০ শে জুন ১০ হাজারেরও বেশি সাঁওতাল জড়ো হয় বীরভূম সংলগ্ন তৎকালীন সাঁওতাল পরগনা জেলার ভগ্নাডিহির মাঠে। ঐতিহাসিকভাবে দিনটি চিহ্নিত হয় হুল দিবস বা সাঁওতাল গণসংগ্রামের দিবস হিসেবে। এর পরের ঘটনা প্রত্যক্ষ সংগ্রামের। ৭ জুলাই হত্যা করা হয় ইংরেজ দারোগা মহেশলাল দত্তকে। ১৭ ই জুলাই পিয়ালপুরে প্রথম সংঘর্ষ হয় ইংরেজদের সঙ্গে। আজ ৩০ জুন সেই ঐতিহাসিক হুল দিবস উপলক্ষে যথোচিত মর্যাদায় সংগ্রামীদের স্মরণ ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়।১৮৫৫ খ্রীস্টাব্দের ৩০ জুন একই পরিবারের ছয় ভাইবোনের সিধু, কানু, বিরসা, চাঁদ, ভৈরব, আর দুই বোন ফুলমণি এবং ঝানু মুর্মুর নেতৃত্বে এই জনজাতি আন্দোলন শুধুমাত্র ভারত নয়, পৃথিবীর ইতিহাসে এক বিরলতম ঘটনা। শাসকের শোষণ, অত্যাচার,বঞ্চনার বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে অধিকার চাওয়ার এই সংগ্রাম আজও যেন প্রেরণার স্রোত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *