সিমলা চুক্তি (Simla Agreement)

নয়াপ্রজন্ম প্রতিবেদনঃ

সিমলা চুক্তি (Simla Agreement) ১৯৭২ সালের ২ জুলাই ভারতের হিমাচল প্রদেশের সিমলায় স্বাক্ষরিত একটি দ্বিপাক্ষিক শান্তি চুক্তি, যা ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ১৯৭১ সালের যুদ্ধের পর সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে গৃহীত হয়। এই চুক্তি ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এবং পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি জুলফিকার আলী ভুট্টো স্বাক্ষর করেন।
চুক্তির পটভূমি
১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের ফলে পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন হয়ে বাংলাদেশে রূপান্তরিত হয়। এই যুদ্ধের পর ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তানের ৯৩,০০০ সৈন্যকে বন্দী করে এবং ১৩,০০০ বর্গকিলোমিটারেরও বেশি এলাকা দখল করে। এই পরিস্থিতিতে উভয় দেশ শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের জন্য সিমলা চুক্তিতে উপনীত হয়।
চুক্তির মূল বিষয়বস্তু
১. দ্বিপাক্ষিক সমাধান: ভারত ও পাকিস্তান সম্মত হয় যে, তারা সমস্ত দ্বন্দ্ব শান্তিপূর্ণ উপায়ে এবং দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করবে।
২. সার্বভৌমত্বের সম্মান: উভয় দেশ একে অপরের আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে এবং অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না।
৩. সিজফায়ার লাইনের পরিবর্তন: ১৯৭১ সালের যুদ্ধের পর সিজফায়ার লাইনকে “লাইন অব কন্ট্রোল” (LOC) হিসেবে পুনঃনির্ধারণ করা হয় এবং উভয় পক্ষ একতরফাভাবে এটি পরিবর্তন না করার প্রতিশ্রুতি দেয়।
৪. কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপন: দূতাবাস পুনরায় খোলা, বাণিজ্য ও যোগাযোগ পুনঃস্থাপন এবং বন্দী সৈন্যদের মুক্তির মাধ্যমে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
৫. বাংলাদেশের স্বীকৃতি: এই চুক্তির মাধ্যমে পাকিস্তান পরোক্ষভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা স্বীকার করে।
চুক্তির প্রভাব ও সীমাবদ্ধতা

কূটনৈতিক অগ্রগতি: চুক্তির ফলে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপিত হয় এবং বন্দী সৈন্যদের মুক্তি সম্ভব হয়।

কাশ্মীর সমস্যা: চুক্তিতে কাশ্মীর সমস্যার স্থায়ী সমাধান হয়নি বরং এটি দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের প্রতিশ্রুতি দেয়, যা পরবর্তীতে কার্যকর হয়নি।

চুক্তি লঙ্ঘন: ১৯৮৪ সালে সিয়াচেন গ্লেশিয়ারে ভারতের অভিযান এবং ১৯৯৯ সালের কারগিল যুদ্ধ চুক্তির লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হয়।

সাম্প্রতিক পরিস্থিতি
২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে, জম্মু ও কাশ্মীরের পাহালগামে সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত ইন্দাস জলচুক্তি স্থগিত করে। এর প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান সিমলা চুক্তি স্থগিত করে এবং ভারতীয় বিমান সংস্থাগুলোর জন্য আকাশসীমা বন্ধ করে দেয়। এই পদক্ষেপগুলি দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *