
সেখ রিয়াজুদ্দিনঃ
জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে বিবাদমান দুই গোষ্ঠীর গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বিরাজমান। তিহার জেলে থাকাকালীন অনুব্রত মণ্ডলের অবর্তমানে জেলার সাংগঠনিক কাজকর্ম পরিচালনার ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোর কমিটি গঠন করে দেন। পরপর দুটি নির্বাচন কোর কমিটি পরিচালিত জেলার বুকে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। পরবর্তীতে জেল থেকে মুক্ত হয়ে ফিরে অনুব্রত মন্ডল আগের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে পড়ে। দাপিয়ে জেলা চষে বেড়ান। গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব যে মেটেনি তা আবার প্রকট হয়ে ওঠে কোর কমিটির মিটিং না হওয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন ইস্যুতে। এমনকি জেলার বিভিন্ন প্রান্তে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে মারামারি, ফাটাফাটি থেকে শুরু করে আইন আদালত পর্যন্ত গড়ায়। সদ্য জেলার তিন মহকুমায় মহা মিছিলে নানান চিত্র ফুটে ওঠে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের। তারই পর ফের অডিও ভাইরাল নিয়ে জড়িয়ে পড়ে বোলপুর থানার আইসি বনাম অনুব্রত মণ্ডল। বিতর্কে’র মাঝেই এবার কর্মী-সমর্থকদের দিক থেকেও দলে কোণঠাসা হচ্ছেন অনুব্রত মণ্ডল! তেমনই হাওয়া উঠেছে বীরভূমে৷ অনুব্রত-অনুগামী হিসেবে পরিচিত সাঁইথিয়ার বনগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান-সহ অসংখ্য তৃণমূল নেতা-কর্মী কাজল শেখের সঙ্গে দেখা করলেন বুধবার বনডাঙ্গা তৃণমূল কংগ্রেস কার্যালয়ে ৷ আর তারপরেই জেলার রাজনীতিতে জল্পনা, তবে কি বীরভূম তৃণমূলে অনুব্রত’র জমানা শেষের পথে !
উল্লেখ্য, সাঁইথিয়ার বনগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তপব্রত ঘোষ-সহ বাকিদের অভিযোগ, সংগঠন ও পঞ্চায়েতের বিভিন্ন কাজ নিয়ে অনুব্রত’র সঙ্গে পরামর্শ করতে গেলে চূড়ান্ত অসহযোগিতা ও হেনস্তার শিকার হচ্ছেন নেতা-কর্মীরা ৷ নেতৃত্বের অভাববোধ করছেন তাঁরা ৷ তাই এবার তাঁরা আর অনুব্রত মণ্ডলের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকবেন না-বলে ঠিক করেছেন ৷ সেই কারণেই তাঁরা বীরভূম জেলা পরিষদের সভাধিপতি ফায়জুল হক ওরফে কাজল শেখের শরণাপন্ন হয়েছেন ৷
তৃণমূলের কেষ্টর প্রতিপক্ষ হিসেবে পরিচিত কাজলের বক্তব্য, “অনেক লোকই সকাল থেকে আমার সঙ্গে দেখা করতে আসেন ৷ কারও কোনও সমস্যা হলে আসেন ৷ আমি যতটা পারি সহযোগিতা করি ৷ সেই রকম সাঁইথিয়া থেকে আমাদের দলের কর্মীরা এসেছিলেন ৷ আর যাঁর বিরুদ্ধে নেতা-কর্মীরা অসহযোগিতার অভিযোগ করছেন, তাঁকেই প্রশ্ন করা উচিত ৷ আর কেউ কারও অনুগামী নয় ৷ সবাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুগামী ৷ আমি দলের প্রতি দায়বদ্ধ ৷ দলের কাজ মন দিয়ে করি ৷”
এ নিয়ে সাঁইথিয়ার বনগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তপব্রত ঘোষ বলেন, “আমরা সকলেই অনুব্রত মণ্ডলের অনুগামী ৷ দাদাকে ভালোবাসি ৷ কিন্তু, গত একমাস ধরে এলাকার সমস্যা ও সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে তাঁর কাছে গেলে, কোনও সহযোগিতা পাইনি ৷ আমরা নেতৃত্বহীনতায় ভুগছি ৷ তাই কাজল দা’র কাছে এলাম ৷ আমাদের পথ দেখাতে বললাম ৷ উনি বলেছেন যে কোনও সমস্যায় পাশে থাকবেন ৷”
একদিকে যখন অনুব্রত-অনুগামীরা শিবির বদলাচ্ছেন, তখন অনুব্রত মণ্ডলের অডিয়ো বিতর্কের মাঝে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান করল কয়েকশো পরিবার ৷ সাঁইথিয়া শহর ও মাঠপলসা অঞ্চল থেকে প্রায় ১৫০ পরিবার তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছে ৷ বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ধ্রুব সাহা তাদের হাতে দলীয় পতাকা তুলে দেন ৷
ধ্রুব সাহা বলেন, “তৃণমূলের অত্যাচারে ওই দলে থাকা যায় না ৷ তাই সবাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টিতে যোগ দেবেন ৷ বিন্দুতে-বিন্দুতে সিন্ধু ৷ আরও লোকজন বিজেপিতে যোগ দেবেন। তৃণমূলের সাম্প্রদায়িক ও সংখ্যালঘু তোষণের রাজনীতির বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলবেন ৷ আমাগী ৯ জুন বোলপুরে আমাদের মিছিল, সেখানে জনজোয়ার দেখতে পাবেন ৷ শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে হবে সেই মিছিল ৷”