নয়াপ্রজন্ম প্রতিবেদনঃ
সচেতনতা র্যালি ও বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে আজ ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস উদযাপন করল বীরভূমের ময়ূরেশ্বর ১ নং আইসিডিএস প্রকল্পের অন্তর্গত বিভিন্ন অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র। পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এদিন নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বিভিন্ন কেন্দ্রগুলিতে এলাকার মানুষজনদের পরিবেশ সচেতনতার বার্তা দিতে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা পোস্টার নির্মাণ করেন এবং এক বর্ণাঢ্য র্যালির আয়োজন করা হয়। র্যালিতে মা, শিশু ও স্থানীয় সাধারণ মানুষ সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। দিনটির অন্যতম আকর্ষণ ছিল প্রতিটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি। এই কর্মসূচির মাধ্যমে কর্মীরা ও গ্রামবাসীরা পরিবেশ সংরক্ষণের গুরুত্ব সম্পর্কে আরও সচেতন হন। আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, “এই ধরনের কর্মসূচি শুধু একটি দিনের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে, সারা বছর ধরেই পরিবেশের প্রতি সচেতনতা জাগিয়ে তুলবে—এটাই আমাদের লক্ষ্য।” পরিবেশ সংরক্ষণ ও সচেতনতা বৃদ্ধির এই মহতী উদ্যোগকে স্থানীয় মানুষ অত্যন্ত উৎসাহের সঙ্গে গ্রহণ করেন। ভবিষ্যতেও এমন কর্মসূচি আরও বড় পরিসরে আয়োজনের পরিকল্পনার কথাও জানানো হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা, সহায়িকা, সিডিপিও সায়নদীপ চট্টোপাধ্যায় সহ মুখ্য সেবিকাগত।




সরকারি নির্দেশ মেনে বিদ্যালয়গুলিতেও দিনটি উদযাপিত হয়। ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে গ্রাম পরিক্রমা করা হয় প্রথমেই। বৃক্ষরোপণের উপর জোর দেওয়া হয় সাথে প্লাস্টিক মুক্ত পরিবেশ করার বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয় দিকে দিকে। বিদ্যালয়ে নির্দিষ্ট ডাস্টবিন ব্যবহারের উপর আবারো অবগত করা হয় সকল ছাত্রছাত্রীদের। বিদ্যালয় চত্ত্বরে গাছপালা যথেষ্ট থাকা সত্বেও ফাঁকা জায়গা গুলিতে আজ ফল ও ফুলের গাছ লাগানো হয়। আজকের দিনের গুরুত্ব সম্পর্কে ছাত্রছাত্রীদের কাছে বক্তব্য তুলে ধরেন প্রধান শিক্ষক সুকুমার গঁড়াই। গাছ লাগানো কেন ভীষণ দরকার তার উপরে একটি ছোট নাটিকা উপস্থাপিত করে পড়ুয়ারা। বৃক্ষছেদন অকারণে নয় সেটাও তুলে ধরা হয়। সকল শিক্ষক শিক্ষিকা ও ছাত্রছাত্রীদের সহযোগিতা নিয়ে আজকের দিনটি যথাযথ ভাবে পালন করা হয়। শিক্ষিকা অনিমা মণ্ডল, সহশিক্ষক বিথীন মণ্ডল, হায়াতুল্লা সেখ ও অর্জুন কুমার দত্ত সকলেই উপস্থিতিতে এদিনের উৎসব উৎসাহের মধ্যেই পালিত হয় বিদ্যালয় অঙ্গনে।


বীরভূম জেলা গাছ গ্রুপের উদ্যোগে পরিবেশ দিবস পালিত হলো সিউড়ি প্রান্তিক সংঘ ক্লাব প্রাঙ্গণে এক মনোরম পরিবেশে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বৃক্ষপ্রেমী ভক্তিময় দাস বর্মণ, সর্প বিশেষজ্ঞ দীনবন্ধু বিশ্বাস, অতিরিক্ত জেলা বনাধিকারিক সোমনাথ চৌধুরী, চন্দন চট্টোপাধ্যায়, সুশান্ত রাহা, তপন বাগচী , সুখেন্দু ব্যানার্জি প্রমুখ।বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রাসঙ্গিক ভাবনা নিয়ে বক্তব্য রাখেন রুদ্রনীল ভট্টাচার্য্য, সোহম সাহা, স্নেহদৃতা রায়, দীপ্সা নাগ সহ অন্যান্য ছাত্রছাত্রীরা। সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী মানবী সরকার ও বাগেশ্রী। সমগ্র অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সংস্কৃতিপ্রেমী সুজাতা সাহা।



সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে দিনটি নানান কর্মসূচির মাধ্যমে পালন করে থাকে। সেরূপ ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ কমিউনিকেশন এন্ড সার্ভিসেস সেন্টার নামক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে মহম্মদবাজার ব্লকের কাপিস্টা-জেঠু পাড়ায় বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে দিনটি পালন করা হয় এলাকার স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের নিয়ে। “প্লাস্টিক নয়-প্রকৃতিকে বাঁচাও ,আগামী প্রজন্মের জন্য -পৃথিবীকে সাজাও”- এই শ্লোগানের মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষার বার্তা ছড়িয়ে দিতে বিভিন্ন ধরনের শ্লোগান সম্বলিত প্লেকার্ড ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে পথপরিক্রমা করা হয়। পাশাপাশি বৃক্ষ রোপন, সাফাই অভিযান এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের পক্ষে রীতা ভান্ডারী, সুকুমার বাহাদুর, অমিত দত্ত সহ বিভিন্ন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা।


সিঞ্চন ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে এবং মাটি কার্বন ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড সংস্থার পক্ষ থেকে রাজনগর ব্লকের গুলালগাছি গ্রামে স্থানীয় চাষীদের নিয়ে এক আলোচনা শিবির অনুষ্ঠিত হয় ৫ জুন বৃহস্পতিবার। বিশ্ব উষ্ণায়ন তথা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কৃষি ক্ষেত্রে চাষীরা যেসমস্ত সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন সে বিষয়ের উপর আলোকপাত করেন। বিশেষ করে বলা হয় মাটির পরীক্ষা ছাড়াই হিসাব বহির্ভূত ভাবে রাসায়নিক সার প্রয়োগ। যার ফলে দিনের পর দিন মাটির স্বাস্থ্য খারাপের দিকে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে চাষীর খরচ বাড়ছে উৎপাদন কমছে। মাটির জল ধারন ক্ষমতা কমছে। এই পরিস্থিতিতে সংস্থার পক্ষ থেকে মাটির পরিপূরক খাবার তথা ব্যাসল্ট দিয়ে জমিতে চাষ পদ্ধতি গড়ে। যাহা সংস্থার পক্ষ থেকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে সরবরাহ করা হবে বলে একান্ত সাক্ষাৎকারে জানান সংস্থার সহসভাপতি ভবেশ মালহোত্রা। তিনি আরও বলেন যে মাটি প্রকল্পের অধীনে আমরা কৃষকদের ক্ষেতগুলোতে মাটির প্রয়োগ প্রকল্প কর্মীদের তত্ত্বাবধানে করি। এই মাটি পরিবেশ থেকে কার্বন প্রাকৃতিকভাবে অপসারণ করতে সাহায্য করে যা জলবায়ু পরিবর্তন এবং গ্লোবাল ওয়ার্মিং কমাতে সাহায্য করে এই কাজের মাধ্যমে আমরা প্রতিষ্ঠানগুলি থেকে অনুদান সংগ্রহ করি যার ফলে আমরা কৃষকদের জন্য নিশুল্ক মাটি সরবরাহ করি। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের প্রোজেক্ট লিড সাতভিক সাহু, অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার সিদ্ধার্থ, এডমিন সঞ্জয় ভট্টাচার্য, স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য জগজীবন মন্ডল প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যাক্তিবর্গ।
