নয়াপ্রজন্ম প্রতিবেদনঃ
ভারতীয় পুরাণ ও ধর্মগ্রন্থগুলিতে এমন কিছু অসাধারণ চরিত্রের উল্লেখ রয়েছে, যাঁরা কেবল তাঁদের যুগেই নয়, কলিযুগেও জীবিত আছেন বলে বিশ্বাস করা হয়। এই ধরনের তিনটি প্রধান চরিত্র হলেন—ভগবান হনুমান, মহর্ষি পরশুরাম এবং অশ্বত্থামা। এঁদের অস্তিত্ব ও তপস্যা আজও বহু ভক্তের হৃদয়ে বিশ্বাস ও আশ্রয়ের প্রতীক।
১. ভগবান হনুমান
হনুমানজী হলেন শ্রী রামের অনন্য ভক্ত, বজরংবলী নামে খ্যাত। তিনি চিরজীবিত বলে হিন্দু ধর্মে বিশ্বাস করা হয়। ধর্মীয় ব্যাখ্যা অনুযায়ী, হনুমানজীকে অমরত্বের বর দিয়েছিলেন স্বয়ং শ্রী রাম। আজও তিনি পৃথিবীতে আছেন এবং সত্যভক্তদের সহায়তা করেন বলে বিশ্বাস করা হয়। অনেক সাধু ও ভক্তদের মতে, গভীর ধ্যান ও ভক্তিতে তাঁকে দর্শন পাওয়া সম্ভব।
বিশ্বাস: বলা হয়, যেখানে রামকথা বা রামায়ণ পাঠ হয়, সেখানেই হনুমান গোপনে উপস্থিত থাকেন।

২. মহর্ষি পরশুরাম
পরশুরাম বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার। তিনি একমাত্র অবতার যিনি সকল যুগেই (সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর ও কলি) উপস্থিত। তিনি ক্ষত্রিয়দের অহংকার দমন করতে ২১ বার পৃথিবীকে পরিশুদ্ধ করেছিলেন বলে পুরাণে উল্লেখ আছে।
তিনি শিবের আশীর্বাদে অমর হয়েছেন এবং কলিযুগে কাল্কি অবতারের গুরু হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বলে বিশ্বাস। আজও হিমালয়ের কোনও গুহায় তপস্যারত অবস্থায় তাঁর অস্তিত্ব বিশ্বাস করেন বহু সাধক।

৩. অশ্বত্থামা
অশ্বত্থামা ছিলেন মহাভারতের দ্রোণাচার্যের পুত্র। তিনি চিরজীবিত, কিন্তু শাপগ্রস্ত। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের শেষে কৃষ্ণ তাঁকে এমন এক শাপ দেন যার ফলে তাঁর শরীরে চিরকাল ঘা ও যন্ত্রণা থাকবে।
বলা হয়, তিনি আজও পৃথিবীতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, নির্জন পাহাড়, অরণ্য বা মরুভূমিতে। কিছু সাধুর মতে, মধ্যপ্রদেশের অরণ্য অঞ্চল বা হিমালয়ে তাঁকে দেখা গেছে এমন দাবি বহুবার করা হয়েছে।

এই তিন চরিত্রের জীবন্ত থাকা শুধুই কোনো পৌরাণিক কল্পনা নয়, বরং হিন্দুধর্মে বিশ্বাস ও আধ্যাত্মিকতার এক গুরুত্বপূর্ণ দিক। তাঁদের অস্তিত্ব আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে ধর্ম, ভক্তি, তপস্যা ও শাস্তির ধারার কোনও অবসান নেই—এমনকি কলিযুগেও তা চালু রয়েছে।
এটি একান্তভাবেই বিশ্বাসের বিষয়, কিন্তু ভারতীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির গভীর চর্চা করতে হলে এই দেবতাদের ভূমিকা ও উপস্থিতিকে অনস্বীকার্য বলা যায়।