ভারতের যেসব শহরগুলিতে আমিষ খাদ্য কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ

নয়াপ্রজন্ম প্রতিবেদনঃ

ভারতের কিছু শহর শুধুমাত্র নিরামিষ খাদ্যভ্যাস অনুসরণ করে না—সেখানে আমিষ খাদ্য (মাংস, মাছ, ডিম) প্রস্তুত, বিক্রয়, পরিবেশন এমনকি বহন করাও নিষিদ্ধ। এই নিষেধাজ্ঞা ধর্মীয় আচার, নৈতিক মূল্যবোধ এবং সরকারিভাবে জারি করা আইনের মাধ্যমে কার্যকর করা হয়।

পালিতানা (গুজরাট) – বিশ্বের প্রথম 100% আমিষ খাদ্য নিষিদ্ধ শহর

কীভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়:

২০১৪ সালে জৈন ধর্মাবলম্বীদের আন্দোলনের পর গুজরাট সরকার পালিতানাকে সম্পূর্ণভাবে non-veg free city ঘোষণা করে।

  • শহরের সব দোকানে মাংস বিক্রি নিষিদ্ধ
  • মাছ, ডিম, ও পশুবধ নিষিদ্ধ
  • কোনো ধরনের পশুবধকারী কারখানা বা কসাইখানা চালানো নিষিদ্ধ
  • আইন অমান্য করলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়

ধর্মীয় প্রভাব:

জৈন ধর্মে অহিংসা একটি মৌলিক নীতি। প্রাণহত্যা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। পালিতানা শহরটি বহু জৈন তীর্থস্থানের কেন্দ্র হওয়ায় এখানকার সামাজিক ব্যবস্থাও সম্পূর্ণ নিরামিষ।

শ্রীরঙ্গম (তামিলনাড়ু) – দক্ষিণ ভারতের আমিষ খাদ্য নিষিদ্ধ ধর্মনগরী

আমিষ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ:

  • শহরের ভিতরে মাংস বা ডিম বিক্রি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ
  • সরকারি ও বেসরকারি হোটেল রেস্তোরাঁয় শুধুমাত্র নিরামিষ খাবার
  • বাসিন্দাদের মধ্যে সামাজিকভাবে আমিষ বর্জিত জীবনযাপন উৎসাহিত করা হয়

ধর্মীয় ভিত্তি:

এটি বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের একটি শক্তিশালী কেন্দ্র। রঙ্গনাথস্বামী মন্দির ও আশ্রমে প্রবেশের নিয়মেও আমিষ নিষিদ্ধ।

পুষ্কর (রাজস্থান) – রাজপুতানার আমিষ খাদ্য নিষিদ্ধ তীর্থস্থান

সরকারিভাবে নিষিদ্ধ:

  • শহরে মদ্যপান মাংস বিক্রয় নিষিদ্ধ
  • হোটেল বা রেস্তোরাঁয় আমিষ পরিবেশন কঠোরভাবে নিষিদ্ধ

বিশ্বাসের ভিত্তি:

পুষ্কর হিন্দুদের ব্রহ্মার একমাত্র প্রধান মন্দিরের শহর। এখানে ধার্মিকতা অনুযায়ী প্রাণীহত্যা ও আমিষ সম্পূর্ণরূপে বর্জনীয়।

ঋষিকেশ ও হরিদ্বার (উত্তরাখণ্ড) – গঙ্গার তীরের আমিষ খাদ্য নিষিদ্ধ নগর

সরকার নির্দেশ:

  • হরিদ্বার ও ঋষিকেশে মাংস ও মদ বিক্রি নিষিদ্ধ
  • পৌরসভার বিধিমালায় এই নিষেধাজ্ঞা সংযোজিত

পবিত্র শহর হিসেবে মর্যাদা:

এগুলি তীর্থস্থান হওয়ায় এখানে নিরামিষ জীবনধারা সামাজিক রীতির অংশ। বহু আশ্রম, যোগ কেন্দ্র এবং ধ্যানস্থল রয়েছে, যেখানে নিরামিষ আহার বাধ্যতামূলক।

এই শহরগুলোতে শুধু নিরামিষ খাবার প্রাধান্য পায় না, বরং আমিষ নিষিদ্ধ – আইন, সমাজ ও ধর্ম সব মিলিয়ে এটি একটি কঠোর বাস্তবতা। এমন শহরে গেলে ভ্রমণকারীদেরও এই নিয়ম মেনে চলতে হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *