আজ কৌশিকী অমাবস্যা : সাধক বামাক্ষ্যাপার সিদ্ধিলাভের দিনে অগণিত ভক্ত-পুণ্যার্থীর ভিড় বীরভূমের তন্ত্রক্ষেত্র তারাপীঠে

শম্ভুনাথ সেনঃ

আজ কৌশিকী অমাবস্যা। বীরভূমের শক্তিপীঠ, তন্ত্রক্ষেত্র তারাপীঠে “মাতারার” মন্দির আজ সেজে উঠেছে অন্য সাজে। বীরভূমের রামপুরহাট ২ নম্বর ব্লকে দ্বারকা নদীর তীরে অবস্থিত এই তারামায়ের মন্দির। জনশ্রুতি প্রায় দেড় হাজার বছর পূর্বে বণিক জয়দত্ত সদাগর এক স্বপ্নাদেশ বলে মাতারার মন্দির নির্মাণ করেন। কালের স্রোতে তা বিলীন হলেও পরবর্তীতে বীরভূমের ময়ূরেশ্বর ২ নম্বর ব্লকের “ঢেকা’র” রাজা রামজীবন রায়চৌধুরী ১৭০১ খ্রিস্টাব্দে পুনরায় মন্দির নির্মাণ করেন। ক্রমে তাও ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। বর্তমান এই মন্দিরটি ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে মল্লারপুরের দানবীর জগন্নাথ রায়ের দেওয়া অর্থে নির্মিত হয়েছে। পঞ্চপীঠের বীরভূমে “তারাপীঠ” সিদ্ধপীঠ রূপে চিহ্নিত। তাই ধর্ম পিপাসু তামাম ভারতবাসী আজও বছরভর ছুটে আসেন এই সাধন ক্ষেত্রে। কথিত সর্বপ্রথম মহামুনি বশিষ্ঠদেব এখানে তারামায়ের সাধনায় সিদ্ধিলাভ করেন। শেষ সাধক বাকসিদ্ধ পুরুষ সাধক বামাক্ষ্যাপা।
২ বছর পর করোনা কাঁটা কাটিয়ে আজ এই বিশেষ তিথিতে তারামায়ের পুজো দিতে জড়ো হয়েছেন অগণিত ভক্ত-পুণ্যার্থী! বিপুল সংখ্যক পুণ্যার্থী ও যাত্রী ভিড় সামাল দিতে পূর্ব রেল আজ থেকে তিন দিন “হাওড়া-রামপুরহাট” বিশেষ ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সকালে স্নানের পর মাতারা’কে রাজবেশে সাজানো হয়। দুপুরে বিভিন্ন ব্যঞ্জন এ মায়ের কাছে ভোগ নিবেদন করা হয়। আজ ২৬ আগষ্ট দুপুর ১২.০১ মিনিটে শুরু হয়েছে অমাবস্যা তিথি, থাকবে আগামীকাল ২৭ আগষ্ট দুপুর ১.২৩ মিনিট পর্যন্ত। এই তারাপীঠের সঙ্গে বামাক্ষ্যাপার নাম জগৎখ্যাত। আজ থেকে ১৮৫ বছর পূর্বে বাংলা ১২৪৪ সনে ফাল্গুনের এক পবিত্র শিব চতুর্দশী তিথিতে জন্মেছিলেন বীরভূমের বামাচরণ চট্টোপাধ্যায়।পরে তিনিই হয়ে যান জগৎখ্যাত বামাক্ষ্যাপা। জন্মভূমি তারাপীঠের পশ্চিমে মাত্র তিন কিমি দূরে খরুন গ্রাম পঞ্চায়েতের “আটলা” গ্রামে। পিতা সর্বানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের হাত ধরে শিশুকালেই “তারামায়ে’র” মন্দিরে প্রবেশ। এই বাল্যকাল থেকেই তাঁর ধ্যান, জ্ঞান, সাধনা ছিল একমাত্র “তারামা”। ‘মা’ ‘মা’ ধ্বনিই ছিল তাঁর সাধনার মূল মন্ত্র! উল্লেখ্য, ১২৭৪ বঙ্গাব্দের এমন এক কৌশিকী অমাবস্যায় সাধক বামাক্ষ্যাপা মাত্র ৩০ বছর বয়সে তারামায়ের সাধনায় সিদ্ধিলাভ করেন। এই উপলক্ষে আজ ২৬ আগষ্ট মন্দির চত্বরে মহাযজ্ঞ ও নিশিপূজার আয়োজন করা হয়েছে। তারাপীঠ মহাশ্মশানে সামিল হাজারো সাধু-সন্ত থেকে তন্ত্রসাধকরা। ভিড় সামাল দেওয়ার জন্য জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পুলিশ কুকুর নিয়ে তারাপীঠ মন্দির চত্বর এলাকা তল্লাশি চালানো হয়। পর্যটক-পুণ্যার্থীদের নিরাপত্তা আঁটোসাঁটো করতে সব রকমের প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারাপীঠ রামপুরহাট উন্নয়ন পর্ষদের সভাপতি তথা প.ব. বিধানসভার উপাধ্যক্ষ ড.আশীষ ব্যানার্জি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *