সামাজিক ভাবনায় জন্মদিনের অনুষ্ঠান

শম্ভুনাথ সেনঃ

কতটা মানবিক গুণের অধিকারী হলে একটি মানুষের জন্মদিনে হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয়। এমন জন্মোৎসব বিরল। যখন আত্মকেন্দ্রিকতা এবং স্বার্থপরতা নিয়ে মানুষ পথ চলছে, দিতে চায়না শুধু নিতে চায়, তেমন সময়ে মিছিলের বিপরীতে হাঁটা মানুষ অমরচাঁদ কুন্ডু। একজন সফল ব্যবসায়ী। বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হিসেবে পেয়েছেন “দক্ষিণবঙ্গ রত্ন সম্মান”। ব্যবসায়ীরা লাভের জন্য ব্যবসা করেন, কিন্তু লাভের একটা অংশ সমাজের কল্যাণে ব্যয় করা এমন মানুষের সংখ্যা নিতান্তই কম। ধনী অনেক আছে কিন্তু যক্ষের ধনের মত আগলে রাখা মানুষের সংখ্যাই বেশি। অমরচাঁদ কুন্ডু আজকের দিনে এক ব্যতিক্রমী ভাবনার মানুষ। সত্যিই একজন সমাজবন্ধু। মানবরত্ন। তাঁর জন্মদিনটি উদযাপিত হয় গত ৯ সেপ্টেম্বর-২০২২। সমগ্র অনুষ্ঠান পরিচালনা বাস্তবায়ন এবং সুষ্ঠুরূপায়নে বীরভূমের মুলুক ভারত সেবাশ্রম সংঘ। ৬৯টি প্রদীপ জ্বালিয়ে দীর্ঘায়ু কামনায় জন্ম দিবস উদযাপিত হল ব্যতিক্রমী ভাবনায়। কিন্তু কে এই অমরচাঁদ কুণ্ডু? অমর চাঁদ কুন্ডুর বাড়ি বীরভূম সংলগ্ন পূর্ব বর্ধমানের জ্ঞানদাস কান্দরা। জন্ম ১৯৫৪ সালের এমন এক ৯ সেপ্টেম্বর। বীরভূম বর্ধমান ও মুর্শিদাবাদ এই তিন জেলার মানুষের সঙ্গে তাঁর নিবিড় যোগ। এদিন তাঁর জন্মদিনকে ঘিরে একটি প্রভাত ফেরি গ্রাম পরিক্রমা করে। দুপুরে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ৮৮ জন দুঃস্থ মেধাবী ছাত্রদের হাতে এককালীন ৬ হাজার টাকা করে বৃত্তি দেওয়া হয়। দুজনের ডাক্তারি পড়ানোর দায়িত্ব নিয়েছেন অমরচাঁদ বাবু। তাঁদের পিছনে অন্তত ১২ লক্ষ টাকা ব্যয় হবে, একথা জানিয়েছেন জন্ম দিবস উদযাপন কমিটির সভাপতি ডঃ পরিমল চট্টোপাধ্যায়। জন্মদিনে কয়েক’শ দুঃস্থদের হাতে নতুন বস্ত্র দান, চক্ষু অপারেশন ব্যক্তিদের চশমা প্রদান, মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিক কৃতি ছাত্র-ছাত্রীদের মেধাবৃত্তি, অন্তত ৪০০ জন ছেলে-মেয়ের গণবিবাহে আর্থিক দায়িত্ব নেওয়া সহ স্কুল,কলেজ স্থাপন, মঠ-মন্দির সংস্কার এমন সামাজিক কর্তব্য কর্মে অবিচল এই সমাজবন্ধু অমরচাঁদ কুন্ডু। এদিন জন্মদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন “মুলুক ভারত সেবাশ্রম সংঘের” অধ্যক্ষ স্বামী সংঘমিত্রানন্দ (শান্তি মহারাজ) বোলপুর আদিত্যপুর পরমানন্দ মিশনের ভুবনেশ্বরানন্দ মহারাজ সহ বহু শিক্ষক, অধ্যাপক, জন প্রতিনিধি,শিল্পী, কলাকুশলী ও সমাজের বিশিষ্ট ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত গুণী ব্যক্তিত্বরা। ছিলেন তাঁর সহধর্মিণী ডলি কুন্ডু সহ পরিবার-পরিজনেরা। এদিন “অমরজ্যোতি” নামে একটি স্মারক পত্রিকা প্রকাশিত হয়। অনুষ্ঠিত হয় মুখোশ নৃত্য,ঢালি ও রায়বেঁশে, বহুরূপী প্রদর্শনী,সর্প সচেতনতা বিষয়ক অনুষ্ঠান,বাউল সংগীত,তর্জা গান এমন নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। দুপুরে একসঙ্গে অন্ততঃ দেড় হাজার মানুষের পঙতিভোজ। জন্মদিনের অনুষ্ঠানে এত ভালোবাসার মানুষজনের উপস্থিতি এও এক নজরকারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *