দীপককুমার দাসঃ
মহঃ বাজারের ৬০নং জাতীয় সড়কের পাশে ডাউন এলাকায় গ্যারেজ রতন দে-র। বড় গাড়ির ইঞ্জিন মিস্ত্রি। আর সকালে নিজের গ্যারেজে আসতেই তার চারপাশে ভিড় করতে থাকে শয়ে শয়ে পায়রা। আর বেলা বারোটা থেকে সাড়ে বারোটার মধ্যে থলি থেকে প্রতিদিন কবুতরগুলোর জন্য ছড়িয়ে দেন দানাশস্য। কখনো সরিষা, কখনোবা গম। প্রায় পাঁচ বছর ধরে এভাবেই গ্যারেজ মিস্ত্রি রতন দে প্রতিদিন নিজের টাকায় পায়রাদের জন্য কিনে আনেন গম কিংবা সরিষা। দিন দিন এই খাবার আর ভালোবাসার টানেই বেড়েছে পায়রার সংখ্যা। এখন প্রায় তিনশোর মতো পায়রা প্রতিদিন রতনের দেওয়া খাবার খায়। পায়রাদের তৃষ্ণা মেটাতে একটি পাত্রে জলের ব্যবস্থাও রেখেছেন। এখন আবার হনুমানের দলও আসতে লেগেছে। ওদের জন্য রতনের বরাদ্দ আলু কিংবা পাকা কলা। রতন দে-র বাড়ি সিউড়ির সোনাতোড় পাড়ায়। এক ছেলে ও এক মেয়ে। পরিবারকে যেমন ভালোবাসেন তেমনি ভালোবাসেন এই পাখি পশুদের।জীবের মধ্যেই খুঁজেন ঈশ্বরকে। এখন প্রায় তিন শতাধিক পায়রার জন্য প্রতিদিন লাগে ১৬কেজি গম। নিজের উপার্জনের টাকা খরচ করে ওদের খাইয়েই খুব খুশি রতন। মহঃ বাজারে রতন দে ২০০০সালে গ্যারেজ খুলেন। মহঃবাজার-সাঁইথিয়া রাস্তার সংযোগস্থলে ৬০নং জাতীয় সড়কের পাশে ওনার গ্যারেজের অবস্থান। এক নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সামান্য ইঞ্জিন মিস্ত্রি সে। বছর পাঁচেক আগে একটা দুটো করে পায়রা আসতো। টিফিনের কিছুটা ওদের জন্য ছড়িয়ে দিতেন। এইভাবেই শুরু। এখনো রতনকে ভালোভাবে চিনে নিয়েছে কবুতরের দল। রতন গ্যারেজে এলেই গাছের ডালে ডালে, পাশে থাকা চা এর দোকানের বা বাড়ির চালে, ছাদে ছাদে শুধুই পায়রার দল। যতই গ্যারেজে কাজ থাকুক না কেন, ওদের খাবার দিতে ভুলেন না কখনো। আর রতনের এই পাখিপ্রেম দেখে বেশ মজাই পায় আরো মানুষজন ,দোকানদাররা। স্থানীয় এক গাড়ির পার্টসের দোকানদার ব্রজ সাধু বলেন, রতনকে বহু দিন ধরে পায়রাদের খাবার দিতে দেখছি। প্রতিদিন দুপুর হলেই রতন ডাক দিলেই ঝাঁকে ঝাঁকে আসে পায়রারা। আরেক পার্টসের দোকানদার দুলু সাধু বলেন, “রতন পশু পাখি প্রেমী। ও নিজে না খেতে পেলেও পায়রাদের খাওয়াতে ভুলে না। কোনোদিন গ্যারেজে না এলে ওর গ্যারেজের কর্মচারীদের নির্দেশ দিয়ে যান পায়রাদের খাবার দিতে”। আর রতন দে জানান, “বছর পাঁচেক ধরে প্রতিদিন পায়রাদের খাবার দিই।এখন প্রতিদিন ১৬কেজি করে গম বা সরিষা লাগে ওদের খাওয়াতে। জীবের সেবার মতো কিছুই নেই। ওদের সংখ্যাটা কত কখনো গুণে দেখেনি। মা লক্ষীর ধন, গুণলেই তো কমে যাবে।” রতনের এই পাখিপ্রেম দেখে অনেকেই, কেউ ওনাকে উৎসাহ দেয়, কেউ আবার সমালোচনা করে। ওসবে কোনো হেলদোল নেই রতনের। ওনার কথা লক্ষ্মীর ধন পেলে ফেলতে নেই। তাই কেউ কেউ বলেন, রতনে রতন চেনে।