রাজনগরে কালীপুজোর রাতে দেবী সিদ্ধেশ্বরীর পুজোয় মুসলিম ভক্ত দেন যজ্ঞের কাঠ

উত্তম মণ্ডলঃ

খ্রিস্টিয় চতুর্দশ শতাব্দী নাগাদ এই ঘটনার শুরু। জেলা বীরভূমের প্রান্তিক অঞ্চল রাজনগর তখন ছিল পূর্ব ভারতের গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশদ্বার। সে সময় রাজনগরে রাজত্ব করতেন জনগণের কাছে বীরত্বের জন্য খ‍্যাতকৃত‍্য রাজা বসন্ত চৌধুরী। তাঁকে এলাকায় বহু মিথ্ প্রচলিত রয়েছে এবং সেই সঙ্গে রয়েছে তাঁর তৈরি বিভিন্ন সৌধের ধ্বংসাবশেষ। রাজনগর মালীপাড়ায় তখন ছিলেন একজন তান্ত্রিক সন্ন্যাসী, লোকে তাঁকে “সিদ্ধেশ্বর তান্ত্রিক” নামেই জানতো। পাশ দিয়ে বয়ে যেতো নদী কুশকর্ণী। এখন সে নদী দূরে সরে গেছে। নদী তীরেই ছিল শ্মশান। আর তার ধারেই ছিল একটি বিরাট শিমুল গাছ। সে গাছে ছিল অজস্র চিল-শকুনের বাস। ঠিক এই জায়গাতেই সিদ্ধেশ্বর তান্ত্রিক শুরু করেন দেবী সিদ্ধেশ্বরীর পুজো। তান্ত্রিক সিদ্ধেশ্বর প্রতিষ্ঠিত বলে দেবীর নাম “সিদ্ধেশ্বরী।” এরপর কালের নিয়মেই একদিন সিদ্ধেশ্বর তান্ত্রিকের জীবনাবসান হয়। বীররাজ বসন্ত চৌধুরী এরপর দেবীর সেবা-পুজোর জন্য বীরভূমের ইলামবাজার এলাকার দেবীপুর গ্রাম থেকে “চক্রবর্তী” উপাধিধারী পুরোহিত নিয়ে এসে জমিজমা দিয়ে বসান রাজনগরে। ব্রিটিশ আমলে অবশ্য তাঁদের সে সব জমিদারী চলে যায়। তবে সেই বংশের দেবদাস চক্রবর্তী, পূর্ণদাস চক্রবর্তী, শীতল চক্রবর্তীরা এখনো ভক্তদের সহায়তায় দেবীর পুজো করে আসছেন। কালীপুজোর রাতে প্রচুর ভক্তের ভিড় হয় এখানে। স্থানীয় ছিপ পাড়ার বাসিন্দা ইসলাম ধর্মাবলম্বী সেখ মনু মায়ের পুজোর জন্য যজ্ঞের কাঠ দেন। ভাইফোঁটার দিন পাশের গ্রাম গাংমুড়ির পানিফলা পুকুরে হয় মায়ের বিসর্জন। সেদিনেও সেখ মনু মায়ের উদ্দেশ্যে ছড়িয়ে দেন কয়েক কেজি বাতাসা। আর ভক্তিভরে গ্রহণ করেন মায়ের খিচুড়ি প্রসাদ। দেবী সিদ্ধেশ্বরী এলাকায় জাগ্রতা দেবী হিসেবে প্রতিষ্ঠিতা। মাটি দিয়ে মায়ের মূর্তি তৈরি করেন স্থানীয় সূত্রধর সম্প্রদায়ের শিল্পী। তিনি এই একটি মূর্তিই তৈরি করেন। এভাবেই কালীপুজোর সময় রাজনগর মালীপাড়ায় দেবী সিদ্ধেশ্বরীর পুজোকে কেন্দ্র করে এলাকা হয়ে ওঠে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মিলনভূমি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *