বিজয়কুমার দাসঃ
সাঁইথিয়া শহরে স্টেশন সংলগ্ন রেললাইনের ওপর নির্মিত রেলসেতুটি সংকীর্ণ এবং জরাজীর্ণ অবস্থায় আছে দীর্ঘদিন। অথচ শহরের এপ্রান্তের সঙ্গে ওপ্রান্তের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম এই সেতুটি। প্রায় এক যুগ আগে সাঁইথিয়ায় ঘটে যাওয়া ভয়ঙ্কর রেল দুর্ঘটনায় সেতুটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তারপর জোড়াতালি দিয়ে সেতু মেরামত করে সেটি ব্যবহারযোগ্য করা হয়েছিল। বর্তমানে এই অপ্রশস্ত সেতুর দুই ধারের রেলিং ভেঙে পড়েছে। যানবাহন চলাচল করলে সেতুটি দুলে ওঠে। সম্প্রতি সেতুতে রেল কতৃপক্ষ বিজ্ঞপ্তি ঝুলিয়ে জানিয়ে দিয়েছে, সেতুটি ভারী যান চলার পক্ষে অযোগ্য। কিন্তু সেই বিজ্ঞপ্তিকে তোয়াক্কা না করেই প্রতিদিন চলছে কমপক্ষে পাঁচ শতাধিক যানবাহন। এছাড়া যাত্রীবাহী বাস চলাচলের ক্ষেত্রেও এই সেতুটি ব্যবহার হয়ে আসছে। এক যুগের বেশি সময়কাল ধরেই সেতুটি সংস্কারের দাবি জানিয়ে এসেছে শহরবাসী। অতীতে শহরের বিশিষ্ট নাগরিকরা বেশ কয়েকবার সেতু সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন। গণস্বাক্ষরিত দাবিপত্র পাঠানো হয়েছে রেল দপ্তরে। দাবিপত্র দেওয়া হয়েছে রেলের বড় কর্তাদের। বারবার হাওয়ায় ভেসেছে সেতু সংস্কার শুরুর গল্প। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে কিছুই হয়নি। পড়শী রাজ্যের লালুপ্রসাদ যাদব সহ এই রাজ্যের অধীর চৌধুরী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীনও দাবি তোলা হয়েছিল সেতু সংস্কারের। বারবার লোক দেখানো মাপামাপি হলেও সংস্কারের কাজ শুরু হয়নি। সম্প্রতি সাংসদ শতাব্দী রায় বেশ কয়েকবার সংসদে এই সেতু সংস্কারের দাবি তুলেছেন। চলতি মাসে সাঁইথিয়া শহর তৃণমূলের পক্ষ থেকেও রেল স্টেশনে অবস্থান বিক্ষোভের মাধ্যমে সেতু সংস্কারের দাবি জোরদার দাবি তোলা হয়েছে। অতি সম্প্রতি বেশ কয়েক মাস থেকে সেতু সংলগ্ন রাস্তা মাপামাপির কাজ চলছে। আবার হাওয়ায় ভাসছে সেতু সংস্কারের খবর। রেল দপ্তরের এবং পূর্ত দপ্তরের বড় বড় অফিসারদের আসা যাওয়া বেড়েছে শহরে। রাস্তার দুধারে দখল হয়ে থাকা জায়গা পরিমাপ চলছে। শোনা যাচ্ছে, ফ্লাই ওভার হবে। রাস্তা প্রশস্ত হবে। হয়তো কিছু বাণিজ্য বিপণি এবং প্রতিষ্ঠানের কিছু অংশ ভাঙা পড়বে বলেও শোনা যাচ্ছে। তবু সেতু সংস্কার যে জরুরী সে ব্যাপারে সবাই একমত। প্রশাসনিক স্তরেও জেলায় আলোচনা হয়ে গেছে বলে জানা যাচ্ছে। তবে কি জট খুলছে সেতু সংস্কারের? .. সত্যিই কি সেতু সংস্কারের কাজ শুরু হবে?..এসব প্রশ্ন ঘুরছে শহরবাসীর মুখে মুখে। অন্যদিকে যান চলাচল নিষিদ্ধ বিজ্ঞাপনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল অব্যাহত নিত্যদিন। যানবাহনের ভারী সেতু দুলেই চলেছে। সত্যিই সংস্কারের কাজ যদি শুরু হয় তবে মানুষ ও যানবাহন যাতায়াতে সংস্কারকালীন সময়ে বিকল্প পথ কী?… এটাও লাখ টাকার প্রশ্ন। তবে সেতু সংস্কার জরুরী। সেই কাজ শুরু হওয়া দরকার অবিলম্বে- এই মত অধিকাংশ শহরবাসীর। অবশ্য এক প্রবীণ নাগরিক মুচকি হেসে বললেন, যখন যুবক ছিলাম তখন থেকেই শুনে আসছি সেতু সংস্কারের গল্প। তাই কাজ শুরু হলে বোঝা যাবে এতদিনের গল্প বাস্তবে রূপায়িত হচ্ছে।