উত্তম মণ্ডলঃ
ছিল না ঘোড়া, তবে তিনি যেন ঘোড়া ছোটার শব্দ পেতেন। রাজপাট ছিল না, কিন্তু তিনি ছিলেন রাজা, রাজনগরের “ছোট রাজাসাহেব।” রাজনগরের আড়ালী গ্রামের ছোট্ট ঘরেই ছিল তাঁর রাজপাট। সহজ সরল অনাড়ম্বর জীবন। সর্বক্ষণের সঙ্গী ছিল একটি পুরোনো রেডিও। সেটি ছিল তাঁর অবসর যাপনের উপকরণ। সেই তিনি চলে গেলেন। হ্যাঁ, রাজার মতোই চলে গেলেন জেলা বীরভূমের প্রান্তিক অঞ্চল রাজনগরের “ছোট রাজাসাহেব” নামে পরিচিত খান আশরাফ আলী। গতকাল রবিবার সিউড়ি সদর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। বয়স ছুঁয়েছিল প্রায় প্রবীণের কোঠায়। আজ সোমবার তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে। এলাকায় এখন শোকের ছায়া। সকালে খবর পেয়ে তাঁর রাজনগরের আড়ালী গ্রামের বাড়িতে ভিড় করেন বহু মানুষ। দিল্লির পাঠান শাসক শের শাহের বংশধর বলে তাঁরা নিজেদের পরিচয় দিতেন। মুর্শিদাবাদ নবাব পরিবারের সঙ্গেও তাঁদের গভীর সখ্যতা ছিল এবং এই সূত্রে সেখানকার নবাব নাজিম ফেরেদুন জা তাঁদের হীরে-জহরতের কাজ করা একটি চাদর উপহার দিয়েছিলেন। কিন্তু সেটি চুরি হয়ে যায়। তবে তাঁদের বাড়িতে এখনো পুরোনো আমলের কিছু নিদর্শন রয়েছে। এই প্রতিবেদকের সঙ্গেও তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল এবং রাজনগরের অনেক ইতিকথা তিনি শুনিয়েছিলেন। আরও শোনানোর কথা ছিল। সেসব এখন অতীত হয়ে গেল। সব মিলিয়ে রাজনগরের মাটিতে এখন আপনজন হারানোর হাহাকার।