সেখ রিয়াজুদ্দিনঃ
বীরভূম জেলার বগটুই গনহত্যা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত লালন সেখ সিবিআই হেফাজতে থাকাকালীন মারা যান। ঘটনাটি গত সোমবার বিকেলের। রামপুরহাট সিবিআই এর অস্থায়ী ক্যাম্পের শৌচাগার থেকে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় মৃতদেহে উদ্ধার করা হয়। ঘটনা চাউর হতেই ফের বগটুই এলাকায় ছাই চাপা আগুন জ্বলে উঠল। লালন সেখ এর স্ত্রী রেশমা বিবি সহ তার পরিবার পরিজনদের দাবি অমানবিক ভাবে অত্যাচার করার পর সিবিআই অফিসাররা খুন করে ঝুলিয়ে দিয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সিবিআই আধিকারিকদের গ্রেফতারের দাবিতে জাতীয় সড়কের ওপর টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এমনকি রাতে লালন সেখ এর মরদেহ ময়না তদন্তের পরও তার পরিবার মৃতদেহ নিতে অস্বীকার করেন। তাদের দাবি যতক্ষণ না সিবিআই আধিকারিকদের গ্রেফতার করা হচ্ছে ততক্ষণ মরদেহ এখানেই শায়িত থাকবে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সিবিআইয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পের সামনে আগেভাগেই পুলিশ মোতায়েন করা হয়। রামপুরহাটে সিবিআইয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পের বাইরে একটি অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পও তৈরি করা হয়েছে। গার্ডরেল দিয়ে মুড়ে ফেলা হয়েছে কেন্দ্রীয় সংস্থার অস্থায়ী ক্যাম্পটিকে। উল্লেখ্য মৃত লালন সেখ এর স্ত্রী রেশমা বিবি ইতিমধ্যে রামপুরহাট থানায় সিবিআই আধিকারিকদের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। সিবিআইয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পে লালন সেখ এর মৃত্যুর পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় সংস্থার উপর আস্থা হারান লালন শেখের স্ত্রী রেশমা বিবি। স্বামীর মৃত্যুর তদন্তভার নিক সিআইডি, এমন আরজি জানিয়েছিলেন তিনি। তাঁর আবেদনে সাড়া দিয়ে বগটুই কাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত লালন শেখ মুত্যুরহস্য উদ্ধারের দায়ভার দেওয়া হয়েছে সিআইডির উপর। এবার রেশমা বিবির অভিযোগের ভিত্তিতেই সিবিআই দপ্তরের ডিআইজি, এসপি-সহ কেন্দ্রীয় সংস্থার সাতজন আধিকারিকের বিরুদ্ধে FIR দায়ের করা হয়। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারা-সহ ৯টি ধারায় মামলা রুজু করেছে রামপুরহাট থানা। পুলিশ সূত্রে খবর, ৩০২ ধারায় খুন, ৩২৩ ও ৩২৫ ধারায় মারধর ও গভীর আঘাত হেনে মারধর, ১২০বি ষড়যন্ত্র, ৪৪৮ অনধিকার প্রবেশ, ৫০৯ মহিলার সম্নানহানি-সহ বিভিন্ন গুরুতর অভিযোগের মতো ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই এই মামলা রামপুরহাট মহ্কুমা আদালতের এসিজেএমের এজলাসে পাঠানো হয়েছে। এদিকে ইতিমধ্যেই রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ থেকে ময়নাতদন্তের পর লালন শেখের মৃতদেহ তুলে দেওয়া হয়েছে তার পরিবারের হাতে। আগে তাঁরা দাবি করেছিলেন, অভিযুক্তরা শাস্তি না পেলে লালনের মৃতদেহ নেবেন না। তবে তদন্ত ভার সিআইডির হাতে যাওয়ায় এদিন দেহ নিতে রাজি হন পরিবারের সদস্যরা। তবে দেহ নিয়ে প্রথমে সিবিআইয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পের বাইরে বিক্ষোভ দেখান। এদিনও অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠে। এরপর ১৪ নম্বর জাতীয় সড়কেও কিছুক্ষণ বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন লালনের পরিবারের সদস্যরা। তবে পুলিশ দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। মঙ্গলবার সন্ধের পর বগটুই কাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত, মৃত লালন শেখের স্ত্রীর আবেদন মেনে ঘটনার তদন্তভার গ্রহণ করেন সিআইডি। জানা যায়, দায়িত্বভার নিয়েই কাজ শুরু করে দেয় পাঁচ সদস্যের সিআইডির একটি প্রতিনিধিদল। রামপুরহাটের বগটুই গ্রামে লালন শেখের বাড়ি যেটা সিল করে দিয়েছিল সিবিআই। সেই বাড়ির সিল খুলে দেওয়া হয় রাতে। বুধবার লালনের গ্রামের বাড়িতে তার মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হয়। অশান্তি এড়াতে ইতিমধ্যেই সেখানেও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। জেলাপুলিশ সুপার নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠী জানিয়েছেন, লালনের পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে পুলিশি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।