পীযূষ মন্ডলঃ
অনেক রকমের মেলা হয় কিন্তু মুড়ি মেলা এটা একটু অন্য রকম৷ শুনলেই অবাক হবেন মুড়ির আবার মেলা হয় নাকী? হ্যাঁ হয়, বেশ জাকজমক ভাবেই হয়৷ আমরা যে যার ধর্ম নিজ নিজ ভাবে পালন করি ঠিকই কিন্তু উৎসবে সামিল হয় সর্বসাধারণের একাংশ৷ এভাবেই আনন্দকে আমরা ভাগ করে জীবনধারন করি৷ অনেক মেলার নাম আমরা শুনেছি, কিন্তু এই মেলার নামটা সত্যিই একটু অন্য রকম৷ মেলার নাম “মুড়ি’র মেলা”৷ অবাক হওয়ার কিছু নেই বাঁকুড়া জেলার বাঁকুড়া সদর থানার অন্তর্গত একটা গ্রাম, গ্রামের নাম কেঞ্জাকুড়া৷ এই গ্রামের প্রধান ঐতিহ্যশালী মেলা এটা৷ বাংলার গ্রাম গঞ্জের অনেক অতীত ঐতিহ্য ও লোক সংস্কৃতির অন্যতম বার্তা বাহক এই ‘কেঞ্জাকুড়ার মুড়ি মেলা’৷ প্রাচীনকাল থেকেই গ্রামের অদূরে রয়েছে দ্বারকেশ্বর নদ৷ আর এই নদের চড়ে রয়েছে মা সঞ্জিবনীর আশ্রম৷ যা প্রাচীন কাল থেকেই ওই গ্রামের মানুষের দ্বারা পূজিত হয়ে আসছে৷ প্রত্যেক বছর ৪ মাঘ এই পূজা হয় এবং এই পূজাকে ঘিরে কেঞ্জাকুড়া গ্রাম ছাড়াও আশ পাশের গ্রাম থেকে মানুষ আসে পূজা দেয় এবং মায়ের মহাপ্রসাদ গ্রহণ করেন৷ ২৪ প্রহরব্যাপী হরিনাম সংকীর্তন হয়৷ ৪ মাঘ বিশেষ একটা দিন এলাকার মানুষের কাছে৷ এদিন প্রত্যেক মানুষ ধনী দরিদ্র নির্বিশেষে জমায়েত হন দ্বারকেশ্বর নদের চড়ে৷ সবাই বাড়ী থেকে মুড়ি নিয়ে আসেন৷ তারপর যে যার ইচ্ছা চপ, সিঙ্গারা, বেগুনি, ঘুগনি, নানান তরকারি দিয়ে নদের চড়ে বসে মুড়ি খান৷ প্রাচীনকাল থেকেই এই রীতি মেনে আসছে এলাকার ধর্মপ্রাণ মানুষেরা৷ এখনো সমান ভাবেই চলছে সেই পুরাযুগের প্রথা৷ নদের চড়ে কুঁয়োর ন্যায় গর্ত করা হয় এবং সেই গর্তের জল দিয়ে মুড়ি মাখানো হয়৷ কথিত আছে এটি মহাভৈরবীর সাধনপীঠ তান্ত্রীক দেবীর ক্ষেত্র৷ যা আনুমানিক ১৫০ বছর আগের কথা৷ জানা যায়, সেকালে বাংলাদেশ থেকে এই নদীর চড়ে নিম গাছের নীচে সাধনা করতে এসেছিলেন নিত্যগোপাল মুখার্জী নামে এক সাধক৷ এমনকি তিনি সাধনায় সিদ্ধিলাভও করেছিলেন৷ তাঁর সঙ্গে এই গ্রামেরও সেকেলে কিছু মানুষ সাধনায় ব্রতী ছিলেন৷ ক্রমে তাঁরা নিত্যগোপাল মুখার্জীর শিষ্য হয়ে উঠেছিলেন৷ গাঁজা, সিদ্ধি দেবীর প্রসাদ হিসাবে তাঁরা নিজেরা খেতেন এমনকি অপরকেও খাওয়াতেন৷ সেখানকার গাছ থেকে নানা রকমের আয়ুর্বেদিক বনোষৌধীও তৈরী হতো সেই সাধকদের দ্ধারা৷ যা সেবন করে গ্রাম সহ পার্শ্ববর্তী গ্রামের মানুষজনদের নানান ব্যাধী সেরে যেতো৷ যার ফলে মানুষ আরো বিশ্বাসী হয়ে উঠতেন সেখানকার সাধকদের উপর৷ বর্তমানে এই আশ্রমের পূজারী গ্রামের মানুষ শ্যামসুন্দর চ্যাটার্জী ও তাঁর পরিবার৷ সেই জন্যই চ্যাটার্জী পরিবারের বিশেষ পরিচিতি এলাকায়৷ এই পূজা এলাকায় বেশ পরিচিত লাভ করেছে৷ এভাবেই ধীরে ধীরে বিশাল উৎসবে পরিনত হয়েছে এই আশ্রমের মুড়ি মেলা ৷
তথ্য সংগ্রহ :- এলাকার অন্যতম মানুষ তথা লেখক জয়ন্ত কর ৷