সোমদত্তা চট্টোপাধ্যায়
‘না’ শুনতে আমরা মোটে চাই না। কেউ কোনো বিষয়ে ‘না’ বললে বা করলে আমরা ঝলসে উঠি। কী এত্ত বড় সাহস!? আমাকে ‘না’ বলা!! খেসারত তো দিতেই হবে। বোলপুরের মেয়েটি কিন্তু ‘না’ করেনি। করেছিল তার বাবা। ঋণ শোধ করেনি। তাই তার খেসারত দিল মেয়ে। বাবা-ই ঋণের টাকার বদলে মেয়ে কে গছিয়ে দিল। কী অদ্ভুত মধ্যযুগীয় নিদান! ‘তুই করিসনি তো কী হয়েছে, তোর বাবা করেছে’ – এই তো যুক্তি। দিনের পর দিন চলে ধর্ষণ। একা নয় আবার, সপার্ষদে কাজ হয়। মেয়ে তো শেষ পর্যন্ত ‘মাল’ বই কিছু নয়। তাই মালের বখরায় নেতার সাথে চেলাও ভাগ পায়। ভাগ না পেলে কী আর নেতা কে মান্যি গণ্যি করবে? অসহায় মেয়ে খোঁজে আশ্রয়। না, তার আশ্রয় নেই। তাকে জন্ম দিয়ে এবং এতদিন খাইয়ে-পরিয়ে কৃতার্থ করেছেন তার পিতা। এই তো পিতৃঋণ শোধ করার উপযুক্ত সময়। তার জন্য সে এটুকুও করতে পারবে ন!? তাই কি হয়!? তাই সব জেনে বুঝেই সম্ভাব্য ধর্ষকের হাতে তাকে তুলে দেয় তার পিতা। আর সম্মতি থাক বা না থাক তার মাতা-ও এক্ষেত্রে আপত্তি তোলেন না। মেয়ের থেকে অনেক বেশি জরুরী ঋণ মকুব। আর ধর্ষকের তো পোয়া বারো – নাকের বদলে নরুণ পেলাম, টাকডুমাডম ডুম। বেশ কিছুদিন চুপচাপ-ই চলছিলো সব। টুঁ শব্দটিও করেনি মেয়ে। কিন্তু কষ্ট ক্রমশ-ই ছাড়ালো সহ্যের সীমা। নিজেই জানান দিলো মেয়ে। জানাজানি হতেই রাজ্য তোলপাড়। ধর্ষকের কড়া শাস্তি চাই। তবে এবার ধর্ষকের সঙ্গে সঙ্গেই মেয়েটির বাবার-ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি উঠুক। ধর্ষকের থেকে মেয়ের বাবার অপরাধ কি কোনো অংশে কম!? না, বাবার অপরাধ আরো বেশি। নিজের বাবা কে-ও যদি ভরসা করা না যায় তো মেয়েরা দাঁড়াবে কোথায়!? সমস্বরে সোচ্চারে উঠুক শাস্তির দাবি। এবার আমরাও কিন্তু আর ‘না’ শুনবো না।