২০০৮এর ছায়া এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে

সন্তোষ পালঃ

ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত রেকর্ড বজায় রাখল বীরভূম জেলা। প্রচারের শেষ দিনে মহম্মদ বাজারে দিলিপ মাহারা নামে এক রাজনৈতিক কর্মী খুন হওয়ায় এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়ায়। ২০১৮ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনেও খুন হতে হয়েছিল কড়িধ্যার দিলদার শেখকে আর ২০১৩ নির্বাচনে রাজনৈতিক ঘটনায় প্রাণ যায় পাঁড়ুই থানার সাগর ঘোষের। এবার পঞ্চায়েত নির্বাচনে বলি ১৮জন। উল্লেখ্য ২০১৮ পঞ্চায়েত নির্বাচনে বীরভূমে প্রায় ৮০ শতাংশ আসনে শাসক তৃণমূল কংগ্রেস জয়লাভ করে। তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের উন্নয়ন দাঁড়িয়ে আছে স্লোগান কিভাবে গণতন্ত্রকে লুট করেছিল তা আজ ইতিহাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেবার রাজ্যে ৩৪ শতাংশ আসনে শাসক দল জয়লাভ করে। তবে ২০২৩ এর ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচন এর প্রকৃতি অনেক খানি ভিন্ন এখন বিরোধী দলগুলি প্রতিরোধের মুখোমুখি, কোন দল কম নয়। তৃণমূলের মধ্যেও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব কম নয় তাইতো একাধিক আসনে তৃণমূল প্রার্থীকে মনোনয়ন জমা দিতে দেখা গিয়েছে। রাজ্যে মোট ৬৩২২৯ টি বুথ আর বীরভূমে ১৯ টি ব্লকের গ্রাম পঞ্চায়েতের আসন সংখ্যা ২৮৫৯ টি যার মধ্যে ৮৯৩ টি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করেছে। অধিকাংশই তৃণমূল কংগ্রেস। ৪৯০ টি পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যে যার মধ্যে ১৬৮ টি আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ এসেছে । দু-একটি আসন ছাড়া সবকটি তৃণমূল কংগ্রেসের। আর জেলা পরিষদের ৫২টি আসনের মধ্যে লাভপুর আসনটি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় লাভ করে শাসক দল। নির্বাচনের কয়েক ঘণ্টা আগে পর্যন্ত পর্যাপ্ত কেন্দ্র বাহিনী রাজ্যে বা জেলায় আসেনি তাই অনেকটাই নির্ভর করতে হবে রাজ্য পুলিশের উপর। যদিও রাজ্য পুলিশের যে ন্যাক্কারজনক ঘটনা কিভাবে রাজনৈতিক নেতাদের মদত দিয়ে ২০২২ এ পৌর নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করেছিল তাও দৃষ্টান্ত হয়ে রয়েছে। বর্তমানে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার পদে বসেই ২৪ ঘন্টার মধ্যেই নির্বাচনে দিন ঘোষণা করা, কোনরূপ আলোচনা বা সর্বদলীয় বৈঠক না ডেকে নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা তাজ্জব করে দিয়েছে। তাই দেখা যাচ্ছে হাইকোর্টের রায়কে উপেক্ষা করে বহু চুক্তি ভিত্তিক কর্মীদের নিয়োগ করা হয়েছে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে। তবে সে রামও নেই, সে অযোধ্যা নেই। ২০১৮ পঞ্চায়েত নির্বাচন যেভাবে প্রহসনে পরিণত করেছিল শাসকদল তার থেকে শিক্ষা নিয়ে বিরোধী দলগুলিকে প্রস্তুতি নিতে দেখা গিয়েছে। যে আসনগুলিতে নির্বাচন হচ্ছে ভোটাররা নির্ভয়ে ভোট দান করতে পারলে ফলাফল অনেকটা বদলে যাবে। ২০০৮ এর ছায়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে এবার। কেননা ২০০৮ এর পঞ্চায়েত নির্বাচনে শাসক বামফ্রন্ট এবং বিরোধীরা প্রায় ৫০-৫০ আসনে জয় লাভ করে। এমনটা যে হবে না তা কে বলতে পারে আর এর জন্য তাকিয়ে থাকতে হবে ১১ জুলাইয়ের জন্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *