শম্ভুনাথ সেনঃ
মহাকাশ বিজ্ঞানে এক নতুন ইতিহাস! চাঁদের দেশে ভারতের চন্দ্রযান। চাঁদের মাটিতে ল্যান্ডার বিক্রমের সফল অবতরণ। নির্দিষ্ট সময়েই চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে নামল ল্যান্ডার ‘বিক্রম’। সাফল্যের সঙ্গে চন্দ্রায়ন-৩ নামিয়ে বিশ্বের কাছে সাফল্যের ইতিহাস তৈরি করেছে ভারত। গতকাল ২৩ আগস্ট বিকেলে ইসরোর গবেষণাগার থেকে সরাসরি লাইভ অনুষ্ঠান দেখতে সারা ভারতবাসীর চোখ ছিল মোবাইল/টিভির পর্দায়। নির্ধারিত নির্দিষ্ট সময়ে সন্ধ্যা ৬.০৪ মিনিটে চাঁদের মাটিতে পা রাখে ভারতের চন্দ্রযান-৩। ভারতের এই চন্দ্রাভিযান নিয়ে যখন সারা দেশ গর্বিত তখন বীরভূমের গর্ব অনেকখানি বাড়িয়ে দিয়েছে বীরভূমের এক বিজ্ঞানী বিজয় কুমার দাই। ৩৯ বছর বয়সী ইসরোর এই তরুণ বিজ্ঞানী বীরভূমের ভূমিপুত্র। বাড়ি বীরভূমের ময়ূরেশ্বর এক নম্বর ব্লকের “দক্ষিণগ্রামে”। আর্থিক প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করে গ্রামেরই জগত্তারিণী বিদ্যায়তন হাইস্কুল থেকে ২০০০ সালে ৮৯ শতাংশ নাম্বার পেয়ে তিনি মাধ্যমিক পাস করেন। পরে বেলুড় মঠের রামকৃষ্ণ মিশন থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে বিজ্ঞান বিভাগে উচ্চমাধ্যমিক পাস। এরপর কল্যাণী গভঃ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে ইলেকট্রনিক্স এন্ড কমিউনিকেশনে বিটেক। তারপর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম টেক পড়ার সময় ২০০৭ সালে ইসরোতে যোগদান করেন। গবেষণার পাশাপাশি ২০০৮ সালে তিনি এম টেক সম্পন্ন করেন। উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে চন্দ্রযান-২ এর অপারেশন এবং ডেটা এনালিস্ট এর দায়িত্বে ছিলেন তিনি। কিন্তু সেবার চন্দ্রাভিযান সফল হয়নি। মহাকাশযানের স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ সেইসঙ্গে গ্রাউন্ড স্টেশন এর সাথে সমন্বয় স্থাপন ছিল তার অন্যতম দায়িত্ব। সেবার চন্দ্রাভিযান পুরোপুরি সফল না হওয়ায় দেশের বিজ্ঞানীদের সঙ্গে কিছুটা হতাশ হয়েছিলেন বীরভূমের বিজয়বাবুও। তবে ৪ বছরের মাথায় এবার সফল চন্দ্রাঅভিযানে আধুনিক ভারতের বিজ্ঞান প্রযুক্তির ইতিহাসে বীরভূমের নামটাও যেন চিরস্থায়ীভাবে ঢুকে পড়ল। সেই বিজয় বাবুর জন্য গর্বিত সারা দেশের সাথে বীরভূম জেলার মানুষ। আজ ২৪ আগষ্ট তাঁর গ্রামের জগত্তারিণী বিদ্যায়তনে একটি সংবর্ধনা জ্ঞাপন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বিজয়বাবুর প্রতিকৃতি নিয়ে বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা একটি শোভাযাত্রায় অংশ নেয়। এদিন বিজয় বাবুর অনুপস্থিতিতে তাঁর মা-বাবা, পরিবারের আত্মীয় পরিজনদের হাতে তুলে দেওয়া হয় স্মারক সংবর্ধনা। তুলে দেওয়া হয় ভারতের জাতীয় পতাকা। ছেলের গর্বে গর্বিত গর্ভধারিণী মা শ্যামলী দাই, বাবা নারায়ণচন্দ্র দাই। সঙ্গে ছিলেন দাদা শিক্ষক বিনয়কুমার দাই। সারা জেলার সঙ্গে গর্বিত বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী ও বর্তমান পড়ুয়ারা। আনন্দিত সারা গ্রামের মানুষজন।