ভাঙ্গা স্বপ্ন – নেভা দীপ

সোমদত্তা চ্যাটার্জীঃ

স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার। নিভে গেছে দীপ। চলে গেছে স্বপ্নদীপ। মৃত্যু টি ঘটে গেছে বলেই এত হইচই। কিন্তু এ তো আর একদিনের বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। বিন্দু বিন্দু করে জমে সিন্ধু প্রমাণ অসভ্যতার বহিঃপ্রকাশ। বিদ্যার সঙ্গে শিক্ষার যে কোনো সম্পর্ক নেই–তা আবারো প্রমাণিত। বিদ্যা তো এখানে সবার আছে, শিক্ষা আছে কই?
রাজ্যের সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। দেশেরও প্রথম সারিতে অবস্থান। এই সারির বিচার কারা করেন? তাঁদের বিচার যে কতদূর ভ্রান্ত, তা তো দেখাই যাচ্ছে। কিন্তু এই ভ্রান্ততা কোনো মতেই স্বীকার করা চলবে না। তাই শুরু হয়ে গেছে ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’-র তত্ত্ব।
ভুক্তভোগীরা খুব ভাল ভাবেই জানেন এ ঘটনা মোটেই বিচ্ছিন্ন নয়। রীতিমত ঘটমান বর্তমান। এখানে যে পরিমাণ অসভ্যতা হয় তার বিবরণ দিতে গেলে লেখাটা পাঠযোগ্য থাকবে না। তবু একটু ছোট করে লিখেই ফেলি।
ঘটনাচক্রে এই বছরেই আমার ছোট বেলার বন্ধুর ছেলে দিতে গেছিল কলা বিভাগের অ্যাডমিশন‌ টেস্ট। দুটি বিষয়ের পরীক্ষা একদিনেই পড়েছিল। ছেলে কে পরীক্ষা দিতে ঢুকিয়ে, ও বাইরে বসে বসেছিল। দুবেলায় দুটি পরীক্ষা। ওকে ওই চত্বরে থাকতে হয়েছিল প্রায় সারাদিনই।
বন্ধুর অভিজ্ঞতা ওর জবানিতেই শুনি নাহয়, ও আমাকে পরেরদিন ফোনে যেমনটি বলেছিল — আর বলিস না রে, শরীর খুব খারাপ।
— কেন? তোর আবার কী হলো?
— কাল যা ঝড় গেছে সারাদিন। শরীর খারাপ হবে না!?
— পরীক্ষা তো ছেলের ছিল। তোর আবার ঝড়ের কী?
— আরে ও তো পরীক্ষার হলে ঢুকে গেল। বাইরে তো আমার নরক যন্ত্রণা।
— মানে?
— আমার শরীরের হাল তো জানিস। হাড়ের ব্যথায় ভুগি। বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারি না। অতবড় ক্যাম্পাস, অথচ বসার কোনো জায়গা নেই রে। চারিদিকে শুধু ডাঁই ডাঁই ফাঁকা মদের বোতল। সব যেন প্রর্দশনী সাজিয়েছে। অনেক খুঁজে তবে একটু বসতে পেলাম। এত মদ কারা খায় বল তো?
— বাদ দে তো ওসব। ছেলের পরীক্ষা কেমন হলো বল।
— পরীক্ষা তো ভালই হয়েছে, কিন্তু ও চান্স পেলেও পড়বে না।
— কেন?
— ওখানে কোনো ডিসিপ্লিন নেই রে। সময়ানুবর্তিতা শব্দটাই মনে হয় ওরা জানে না। গিয়ে ঘন্টা দেড়েক বসেই আছি। কারো কোনো হুঁশই নেই।
— সে কী রে!!
— আরো শোন, ছাত্র-ছাত্রী নির্বিশেষে কী এক অদ্ভুত সিগারেট খাচ্ছে বাপু, কী উৎকট তার গন্ধ। বাড়িতে কর্তাও তো খায়। তেমন তো নয়। আমার তো ঐ গন্ধতেই চোখ নাক সব জ্বালা করছিল। তার সঙ্গে শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছিল। আজও কাশি‌ হচ্ছে।
— তাহলে তো খুব বাজে ব্যাপার রে।
— আরো আছে বন্ধু, বাথরুমে যাবার ভয়ে সারাদিন জল সুদ্ধু খাইনি।
— সে আবার কী! ওদের ওখানে মেয়েদের টয়লেট নেই?! যাঃ, সে আবার হয় নাকি?!
— টয়লেট নেই কে বলেছে?
— তুই তো বললি, বাথরুমে যাওয়াটাই সমস্যা।
— টয়লেট অবশ্যই আছে। মেঝেতে পা ফেলবার জায়গা নেই। used condom এ ভর্তি। সব মিলিয়ে ঠিক করেছি, ছেলে চান্স পেলেও পড়াবো না।
(ওর ছেলে চান্স পেয়েছে এবং ভর্তি করেনি। স্কটিস চার্চ কলেজে ভর্তি করেছে)
এ তো গেল আমার বন্ধুদের কথা। অনেকেরই মনে হতে পারে ছেলে কে ভর্তি না করাটা বাড়াবাড়ি। সবাই তো আর মরে যাচ্ছে না। ঐ ছেলেটারই নিশ্চই কিছু গড়বড় ছিল। কিন্তু মৃত্যু হয়নি যাদের, তারাও কি খুব ভাল থাকে? সিনিয়রদের আরো এক নিদারুণ উল্লাসের বিষয় হলো–বিষ। নতুনদের শিরাতে জোর করে বইয়ে দেওয়া হয় বিষ, দিনের পর দিন। এইভাবেই ধীরে ধীরে গড়ে উঠছে মাদকাসক্ত বাহিনী। এইসব নিষিদ্ধ মাদকও কেড়ে নেয় প্রাণ। হয়তোবা কলেজ থেকে বেরিয়ে যাবার পরে। তাই সেগুলো আর গুনতি তে আসে না।
খবরে দেখলাম ধর-পাকড় চলছে। অপরাধীদের সাজা হওয়ার বিষয়ে খুব যে আশান্বিত, তা নই। কারণ এজন-দুজন কে সাজা দিলে এ চক্র ভাঙবে না। কলেজ ও রাজ্য প্রশাসন কে সক্রিয় হতে হবে। আর প্রতিষ্ঠিত প্রাক্তনীদের পুরোভাগে থেকে পরিস্থিতি পরিবর্তনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। তবে যদি কিছু কাজ হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এআই শিখুন, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এগিয়ে যান!


এআই কোর্স: ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী, শিক্ষক এবং ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য সম্পূর্ণ গাইড! Zed Age Infotech এর তরফ থেকে প্রথমবার বীরভূম জেলায়! আপনি কি ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী, শিক্ষক নাকি ছাত্র/ছাত্রী? আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) আপনার কাজ এবং লেখাপড়াকে আরও সহজ এবং কার্যকর করতে পারে! Zed Age Infotech এর নতুন এআই কোর্সে যোগ দিন! বিশদ জানতে কল করুন 9474413998 নম্বরে অথবা নাম নথিভুক্ত করতে নীচের লিঙ্কে ক্লিক করুন।

This will close in 120 seconds