বৃক্ষ ছেদন ও প্রাণী হত্যা সামাজিক অপরাধ – বনভূমি ও বন্যপ্রাণী রক্ষা করা একান্ত জরুরী

সনাতন সৌঃ

প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে ও পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধ করতে হলে বনভূমি ও বন্যপ্রাণী বাঁচানো খুবই জরুরী। বন জঙ্গল আর বন্যপ্রাণী বেঁচে না থাকলে জন জীবনে কী মারাত্মক ক্ষতির প্রভাব পড়বে তা ভাববার সময় এসে গিয়েছে। ফি বছরই বন জঙ্গলে কাঠ চুরি, আগুন লাগানো, বন্যপ্রাণী হত্যা ও চুরির ঘটনা ঘটছে। এর বিরূদ্ধে এত প্রচার করা সত্বেও বন্ধ করা যায়নি বন্যপ্রাণী শিকার। নানান ধরণের পাখি, খরগোশ, কাঠবিড়ালি, কচ্ছপ, গোসাপ, বন্যবিড়াল সহ নানান প্রজাতির প্রাণী শিকার চলছে এখনও। যা পরিবেশের পক্ষে বিপদজনক। যার ফলে পরিবেশ দূষণ বাড়ছে। এসব ঘটনা তুলে ধরতেই ২০১২ সাল থেকে ২১শে মার্চ দিনটিকে আন্তর্জাতিক ‘বন্যপ্রাণ দিবস’ হিসাবে পালন করা হয় বিশ্বজুড়ে। বীরভূম জেলার বন বিভাগের উদ্যোগেও এই দিনটি জেলা জুড়ে প্রতিটি রেঞ্জ এলাকায় বন্যপ্রাণ দিবস হিসাবে পালিত হয়। জেলার বন বিভাগের পক্ষ থেকে বনভূমি ও বন্যপ্রাণী রক্ষা করতে জন সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। একই ভাবে জঙ্গলে আগুন লাগানো, কাঠ চুরি ও বন্যপ্রাণী চোরাশিকারী আটকাতে বন সুরক্ষা কমিটি ও বন সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের সজাগ করা হয়। সঙ্গে বিলি করা হয় লিফলেটও। এত সব সুব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও জঙ্গলে আগুন লাগানো বন্ধ করা যায়নি। জঙ্গলে মাফিয়াদের দৌরাত্ম বাড়ছে। প্রসঙ্গক্রমে বলা যায়, গত বছর শীতকালে বক্রেশ্বর নীলনির্জন এলাকায় জঙ্গলে কে বা কারা আগুন ধরিয়ে দেয়। সেই আগুনে শুধু গাছ পোড়েনি, পুড়ে মারা গিয়েছে অসংখ্য বন্যপ্রাণী। নাম না জানা বহু ছোট বড় গাছের প্রজাতিও পুড়ে শেষ হয়ে গেছে। এছাড়া প্রতিনিয়ত এ ধরণের ঘটনা ঘটছে। তাতে বিপাকে পড়েছে জঙ্গল লাগোয়া মানুষজন। ঐ সব এলাকার অনেক পরিবারের জীবন জীবিকা এই বনভূমির উপর নির্ভরশীল। জঙ্গল লাগোয়া অনেক গরীব মানুষ জঙ্গলে পাতা ও কাঠ কুড়িয়ে তাদের সংসার চালান। জঙ্গলের পাতার থালা বা অন্যান্য আসবাবপত্র তৈরী করে বাজারে বিক্রি করে। বন জঙ্গলে কেন বার বার এ ধরণের ঘটনা ঘটছে? এলাকাবাসীরা অনেকেই বলছেন, শীতকালে পাতাঝরা শুরু হলেই জঙ্গলে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। জঙ্গলে গরু চরাতে এসে অনেকে মজার ছলে পাতাতে আগুন ধরিয়ে দেয়। আবার কেউ কেউ জঙ্গলের পথ পেরিয়ে যাওয়ার সময় জলন্ত বিড়ি বা সিগারেট ছুঁড়ে ফেলে দেয়। আবার অনেক সময় দেখা গিয়েছে, দুষ্কৃতিরা কাঠ চুরি করার জন্যই জঙ্গলে ইচ্ছাকৃতভাবে আগুন ধরিয়ে দেয়। এসব ক্রমাগত ঘটনার প্রেক্ষিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জেলার বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট বৃক্ষ, প্রাণী ও পরিবেশ প্রেমী ব্যক্তিরা। অতি সত্বর এসব ঘটনা বন্ধ করতে তাঁরা পুলিশ প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। এছাড়াও রাজ্য সরকারের বন বিভাগ দপ্তর থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “জঙ্গলে কেউ আগুন লাগাবেন না। এটি ভারতীয় বন আইন ১৯২৭ নম্বর ধারা অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ। কোনো জঙ্গলে আগুন দেখলেই নিকটবর্তী বন দপ্তরে সত্ত্বর খবর দিন। দমকল দপ্তরে বা পুলিশ প্রশাসনকে জানান”।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *