সন্ধিপুজোয় কুন্ডলার পারিবারিক পুজোয় বন্দুকের শব্দ

বিজয়কুমার দাসঃ

গ্রামের নাম কুণ্ডলা। কথিত আছে, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের “গণদেবতা” উপন্যাসের কঙ্কনা গ্রামই আসলে কুণ্ডলা। একদা জমিদার শাসিত গ্রাম। এখনও সারা গ্রাম জুড়ে মুখোপাধ্যায় পরিবারের জমিদারি জমানার নানা চিহ্ণ। জমিদার মহলের অধিকাংশ প্রাচীন অট্টালিকা রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। কিন্তু এই গ্রামের তিন শতাধিক বছরের প্রাচীন পারিবারিক পুজোয় এখনও পুরনো ঐতিহ্য মান্য করা হয়। অষ্টমীর সন্ধিপুজোয় আকাশমুখী বন্দুক দেগে প্রাচীন ঐতিহ্য বজায় রেখেছে মুখোপাধ্যায় পরিবারের উত্তরাধিকারীরা।
শোনা যায়, বর্ধমানের চিটাহাটিগুড়পাড়া থেকে প্রভুরাম মুখোপাধ্যায় কুন্ডলায় এসে জমিদারির পত্তন করেন। সেই আমলে তাদের উৎসব অনুষ্ঠানের রমরমা এলাকায় সুবিদিত এখনও। প্রভুরাম, হাটুরাম এর পর রজনীভূষণ মুখোপাধ্যায়ও সুপরিচিত ছিলেন তাঁর আমলে। এবারে এই পরিবারের পুজো ৩১০ বছরে পড়ল। সেই রমরমা হয়তো এখন নেই। কিন্তু সেই প্রাচীন পারিবারিক পুজো এখনও হয় যাবতীয় পুরনো রীতি মেনেই। এখন নিজস্ব মণ্ডপ। তিন শতাধিক বছরের প্রাচীন পুজোটি বড় তরফের পুজো হিসাবে পরিচিত। এছাড়া এই পুজো শুরুর প্রায় পঞ্চাশ বছর পরে শুরু হয়েছিল ছোট তরফের দুটি পুজো। সেগুলিও অনুষ্ঠিত হচ্ছে যথারীতি। তবে বন্দুক দাগার নিয়ম মান্য করা হয় বড় তরফের পুজোতেই। বড় তরফের পুজোর দায়িত্বে যাঁরা থাকেন তাঁদের মধ্যে দিলীপ মুখার্জী, গৌতম মুখার্জী, মোহর মুখার্জীর সূত্রে জানা গেল, এক লক্ষাধিক টাকা ব্যয় হয় এই পুজোয়। পারিবারিক সদস্যদের আর্থিক সহযোগিতায় পুজো হয়। অন্যদিকে ছোট তরফের দুটি পুজোর দায়িত্বে যাঁরা থাকেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন মৃণালকান্তি মুখার্জী, কমল মুখার্জী, নীলোৎপল মুখার্জী, অভি মুখার্জী।
বড় তরফের পুজোয় এখন বন্দুক দাগেন মুখার্জী বংশের উত্তরাধিকারী গোরাচাঁদ মুখোপাধ্যায়। শুধু এই জন্যেই বছরের পর বছর বন্দুকটির পরিচর্যা করে সেটি সচল রাখা হয়। প্রতিমায় ডাকের সাজ ব্যবহার করা হয়। কুণ্ডলার মৃৎশিল্পী সাধন চুনারী প্রতিমা নির্মাণ করেন। পুজোর পরে সর্বমঙ্গলাতলায় দ্বাদশীর দিন প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের সমাবেশে খিচুড়িভোগ রান্না করে পরিবেশন করা হয় গ্রামীণ সম্প্রীতি রক্ষার্থে। দুই তরফের প্রতিনিধিরাই উপস্থিত থাকেন। বর্তমান বিধানসভার ডেপুটি মেয়র আশিস ব্যানার্জী এই মুখার্জী পরিবারের সঙ্গে আত্মীয়তার সূত্রে আবদ্ধ। দ্বাদশীর মিলন উৎসবে তিনি সক্রিয় ভূমিকা নেন বলে গ্রামের যুবকেরা জানিয়েছেন। তিনশো দশ বছরে পদার্পণ করা বড় তরফের পুজোয় এ বছরও গর্জে উঠবে বন্দুক। এভাবেই প্রাচীন ঐতিহ্যের রীতি বহন করে চলেছেন মুখোপাধ্যায় বংশের উত্তরসূরিরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *