সনাতন সৌঃ
ঝাড়খন্ড ঘেঁষা প্রত্যন্ত একটি গ্রাম দিগুলী। এই গ্রামে রায়পাড়ায় আছে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী শ্রী শ্রী দুর্গা মন্দির। এই মন্দিরের দুর্গাপূজা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ঋষি মহতাপ দেবশর্মা। তিনি পঞ্চমুন্ডীর আসনে বসে সিদ্ধলাভ করেন। সে সময় তিনি মাটির চালাঘরে দুর্গা পূজার প্রথম প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করেছিলেন। পরে গ্রামবাসীর ও ভক্তদের সার্বিক সহযোগিতায় এই মন্দিরটি নবরূপে নির্মাণ করা হয়। এই মন্দিরটি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা ও গ্রাম উন্নয়নের জন্য রায়পাড়া আর্য সমিতির কালচার কমিটি গঠন করা হয়। এবছর ১১২তম দুর্গোৎসবে পড়লো। এই গ্রামটি বর্তমান সময়ের থেকে অনেকটি পিছিয়ে আছে। এখানে নেই কোনো যোগাযোগের সুব্যবস্থা, নেই কোনো ইন্টারনেট পরিষেবা। তবুও নানান প্রতিকূলতার মধ্যেও রায়পাড়া আর্য সমিতির কালচার কমিটির সদস্যরা সমাজের পিছিয়ে পড়া দু্ঃস্থ মানুষের কল্যাণের জন্য মহৎ কাজে নেমে পড়েছেন। তাঁরা সমবেত উদ্যোগ নিয়ে গঠন করেছেন “দুর্গোৎসবে গরীবদের আনন্দ দান” কর্মসূচি। পুজোর খরচ বাঁচিয়ে তাঁরা প্রতি বছর ধারাবাহিকভাবে নানান জনহিতকর কাজে ও গরীবদের সাহায্য করে থাকেন। এবছর শারদ উৎসবে গরীবদের মুখে হাসি ফোটাতে এই কালচার কমিটির সদস্যরা নানান উদ্যোগ নিয়েছেন। তাঁরা ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে ১৫০ জন দু্ঃস্থদের নতুন বস্ত্র বিতরণ করেন। এছাড়া মন্দির প্রাঙ্গণে সকলকে আনন্দ দিতে নানান ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সমিতির আয়োজিত অনুষ্ঠানের প্রথম দিনে “আগমণী” নামে শারদীয়া অষ্টম সংখ্যা পত্রিকা উন্মোচন করা হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট ক্রীড়াবিদ তথা রাণীশ্বর ময়ূরাক্ষী গ্রামীণ কলেজের অধ্যক্ষ ড রইস খান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন লাঙ্গুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিকাশ পাত্র, রাজনগর শিসাল ফার্ম উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শুভাশীষ ঘোষ, স্থানীয় স্বাস্থ্য আধিকারিক হরপ্রসাদ মুখার্জি, জেলা পরিষদের সদস্য বিমান সিংহ, সাংবাদিক সাধন সেন প্রমুখ। অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন পত্রিকার সম্পাদক অঙ্কিতা রায়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত বক্তারা এই কালচার কমিটির জনহিতকর কাজের জন্য ভুয়সী প্রশংসা করেন। ধন্যবাদ ঞ্জাপন করেন। পত্রিকার উপদেষ্টা বিদ্যুৎ রায়। অনুষ্ঠানে তিনদিন ব্যাপী বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা শিল্পীরা অনবদ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন। এছাড়া কুইজ প্রতিযোগিতা, শঙ্খ বাজানো প্রতিযোগিতা হয়। সমগ্র অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন অধ্যাপিক অঙ্কিতা রায়। পরে খেলার ময়দানে ফুটবল টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়। পুজো কমিটির অন্যতম উপদেষ্টা বিদ্যুৎ রায় জানান যে, আর্য সমিতির কালচার কমিটির জনহিতকর কাজের জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছেন-শুধু বীরভূম, ঝাড়খন্ড নয়, আসানসোল, শিলিগুড়ি, কলকাতা, হায়দ্রাবাদ সহ অন্যান্য রাজ্যের বসবাসকারী কালচার কমিটির সদস্যদের বন্ধু বান্ধব ও আত্মীয় স্বজনেরা। কমিটির পক্ষ থেকে পুজোর চারদিন আরতি করার পর বিশেষ মহাপ্রসাদের আয়োজন করা হয়। অদূর ভবিষ্যতে আমাদের আরও কিছু নতুন ভাবনায় পরিকল্পনা আছে।