উত্তম মণ্ডলঃ
রকেট উৎক্ষেপণের জন্য দরকার হিলিয়াম। হিলিয়াম হালকা গ্যাস। বেরিয়ে আসতে পারে সহজেই। সেজন্য রকেটের চুল্লির পদার্থগুলো জ্বলে যাওয়ার পর সেই ফাঁকা অংশ পূরণ করা হয় হিলিয়াম দিয়ে। এছাড়া নিউক্লিয়ার রি-অ্যাক্টরের সুরক্ষার কাজেও দরকার হয় হিলিয়ামের। পারমাণবিক চুল্লির সুপার কণ্ডাক্টিভ সাইক্লোটনের ক্ষেত্রেও দরকার হয় হিলিয়াম। একসময় ভারতসহ বিভিন্ন দেশে এই হিলিয়াম রপ্তানি করতো আমেরিকা। প্রতি বছর এই হিলিয়াম কিনতে ভারতের খরচ হতো প্রায় ৫৫ হাজার কোটি টাকা।
বীরভূমের শৈবক্ষেত্র দুবরাজপুর থানার বক্রেশ্বরে অগ্নিকুণ্ডের জল থেকে হিলিয়াম সংগ্রহ করা হতো একসময়। এটি আবিষ্কারের পিছনে ছিল বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসুর অবদান। ইংরেজি ১৯৫৬ সালের ঘটনা। বীরভূমের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য তখন বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু। কাজের ফাঁকে তিনি বেরিয়ে পড়তেন বীরভূমের বিভিন্ন গ্রামে। এভাবেই একদিন তিনি এলেন বক্রেশ্বরে। এখানে এসে তিনি দেখলেন, অগ্নিকুণ্ডের ফুটন্ত গরম জল থেকে এক ধরনের গ্যাস বেরোচ্ছে। তিনি পরীক্ষা করে জানলেন, এটি হিলিয়াম। এরপর তিনি তাঁর প্রিয় ছাত্র শ্যামাদাস চট্টোপাধ্যায়ের হাতে এ বিষয়ে দায়িত্ব দেন।
শ্যামাদাস চট্টোপাধ্যায় অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বুঝলেন, সত্যিই এ গ্যাস হিলিয়াম। তারপর সেই হিলিয়াম সংগ্রহের জন্য তৈরি হলো হিলিয়াম ল্যাবেরেটরী। বর্তমানে এটি এখন একটি ভুতুড়ে বাড়ির চেহারা নিয়ে দাঁড়িয়ে। গ্যাস সংগ্রহ বন্ধ। এটিকে কেন্দ্র করে মানুষের কর্মসংস্থানও বন্ধ। নি:স্ব, রিক্ত, বন্ধ্যা এই ল্যাবেরেটরী এখন ধ্বংসের পথে ইতিহাস হতে চলছে বীরভূমের শৈবক্ষেত্র বক্রেশ্বরের বুকে।