
শম্ভুনাথ সেনঃ
বীরভূমের মহম্মদবাজার ব্লকের সেহেলা রায়পুর গ্রামে আনন্দলোক আশ্রমের রজত জয়ন্তী বর্ষ উৎসব ৭-৯ মার্চ তিন দিন ধরে মহাসমারোহে উদযাপিত হলো। এছাড়া গ্রামের শিবমন্দিরে মহাশিবরাত্রি উপলক্ষে ভক্ত-পুণ্যার্থীদের ঢল নামে। প্রথম দিনে বিশ্ব কল্যাণ কামনায় বিশ্বশান্তি মহাযজ্ঞ অনুষ্ঠিত হয়। দুপুরে সাংস্কৃতিক মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় জেলার কিংবদন্তি লেটো শিল্পী হরকুমার গুপ্ত এবং নাট্যশিল্পী উত্তম চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে এক মনোজ্ঞ অনুষ্ঠান। আশ্রমের পক্ষ থেকে তাঁদেরকে সংবর্ধনা জ্ঞাপন করা হয়। দেশ-বিদেশ থেকে আসা অসংখ্য বিজ্ঞ মহলের মন ছুঁয়ে যায় এই আশ্রমিক পরিবেশে। পরিশেষে স্থানীয় শিশু শিল্পীদের নিয়ে নৃত্যনাট্য চন্ডালিকা ও চিত্রাঙ্গদা, ভক্তি গীতি পরিবেশিত হয়। চলে পুরাণের উপর ক্যুইজ প্রতিযোগিতা। দ্বিতীয় দিন সকালে শোভাযাত্রা সহকারে প্রভাতফেরীর মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। তিন শতাধিক দুঃস্থদের হাতে তুলে দেওয়া হয় নতুন বস্ত্র। দুপুরে অনুষ্ঠান মঞ্চে বাংলার গর্ব বীরভূমের প্রবাদপ্রতিম লোকসঙ্গীত শিল্পী পদ্মশ্রী প্রাপক রতন কাহারকে বিশেষ সংবর্ধনা দেওয়া হয় আশ্রমের পক্ষ থেকে। তিনি বেশ কয়েকটি স্বরচিত গান পরিবেশন করে শ্রোতা দর্শকদের মুগ্ধ করেন। উল্লেখ্য, এই লোকসংগীত শিল্পী বর্তমানে সিউড়ির বাসিন্দা হলেও জন্মভূমি সিউড়ি সংলগ্ন কেন্দুলী গ্রামে। এদিন শিল্পী রতন কাহারের জীবন সংগ্রামের কথা তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন তাঁরই গ্রামের সহযোগী ভ্রাতৃপ্রতিম সাংবাদিক সনাতন সৌ। সন্ধ্যায় প্রয়াত সঙ্গীত শিল্পী রামকুমার চট্টোপাধ্যায়ের অনুরাগী শিষ্যগন টপ্পার আঙ্গিকে আধ্যাত্মিক বাউল গান পরিবেশন করেন। এছাড়াও গভীর রাত পর্যন্ত পরিবেশিত হয় ভাব সঙ্গীত। শেষ দিনে অনুষ্ঠিত হয় ভাগবত কথা। মধ্যাহ্নে হাজার ছয়েক মানুষের নরনারায়ন সেবার আয়োজন করা হয়। প্রত্যহ আশ্রমে গুরু পূজা, গুরু বন্দনা ও নিত্যারতির পাশে মহাশিবরাত্রি মহাসমারোহে অনুষ্ঠিত হয়। শিব মন্দির চত্বরে শিবরাত্রি উপলক্ষে বসে গ্রামীণ মেলা। মেলায় বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কয়েক হাজার মানুষের অংশগ্রহণে উৎসব হয়ে ওঠে মহামিলন ক্ষেত্র। অনুষ্ঠানের শ্রোতা দর্শকদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন আশ্রমের সেবক তথা শিক্ষক সুমন ব্যানার্জী।