দীপককুমার দাসঃ
গত ১৩ই মে মুক্তি পেয়েছে অনীক দত্তের অপরাজিত। সত্যজিৎ রায়ের অমরসৃষ্টি পথের পাঁচালী গড়ে ওঠার নেপথ্য কাহিনী নিয়েই তৈরি করা হয়েছে অপরাজিত। মুক্তি পাবার পর থেকেই বক্স অফিস হিট। আর এই ছবিতে ইন্দিরা ঠাকরুণের চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকদের মনে জায়গা করে নিয়েছেন বর্ষীয়ান লেটো শিল্পী হরকুমার গুপ্ত। দীর্ঘ দিন ধরে তিনি জড়িয়ে আছেন লোকগান লেটোগানের দলের সঙ্গে। তৈরি করেছেন নিজস্ব দল শ্রী দূর্গা লেটো আসর। লেটোগানের থাকে গানের সঙ্গে অভিনয়। আর লেটো গানের প্রয়োজনে পুরুষ হয়েও কখনো কখনো সেজেছেন নারী। তুলে এনেছেন এক ঝাঁক লেটো শিল্পী। আর দীর্ঘ দিন লেটো গানের চর্চা অপরাজিত সিনেমায় ইন্দিরা ঠাকরুণ চরিত্র কে ফুটিয়ে তুলতে সাহায্য করেছে। ইন্দিরা ঠাকরুণ এর মৃত্যু দৃশ্য নিঁখুতভাবে বড় পর্দায় তুলে ধরেছেন তিনি। তবে শুধু এই প্রথম নয়, এর আগেও বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রে ছোট ছোট দৃশ্যে অভিনয় করেছেন তিনি। হ্যামিলটনের বাঁশিওয়ালা সিনেমায় হাতি তাড়ানোর দৃশ্যও খুব সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলে ছিলেন। দীর্ঘ দিন ধরে বসবাস মহঃবাজার পঞ্চায়েতের খড়িয়া গ্রামে। আদি নিবাস বোলপুরের নিকট দ্বারোন্দা। অভাবের তাড়নায় কিশোর বয়সে রোজগারের জন্য ঘর ছাড়তে হয়েছিল হরকুমার গুপ্তকে। সিনেমা হলের সামান্য কাজ করতে করতেই লেটোদলের শিল্পীদের সঙ্গে পরিচয়। তখন থেকেই শুরু লেটো দলে অভিনয়। দীর্ঘ দিন লেটো দলে অভিনয় করতে করতে নিজেই গড়ে তুলেন শ্রীদূর্গা লেটো আসর। ডাক আসতে থাকে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে। লেটো গানের অশ্লীলতাকে বাদ দিয়ে তিনি লেটো গানকে সার্বজনীন করে তোলেন। সত্তর ছুঁইছুঁই হরকুমার গুপ্ত হয়ে উঠেন লেটো সম্রাট। জীবনের সায়াহ্নে এসে অপরাজিত সিনেমায় ইন্দিরা ঠাকরুণ চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান। আর তাতে চরিত্রটাকে নিপুণ ভাবে উপস্থাপন করেছেন। তার অভিনয় প্রশংসিত হচ্ছে। অপরাজিত সিনেমায় সত্যজিৎ রায়ের চরিত্র অপরাজিত রায়কে খুব সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন জিতু কামাল। এই ছবি বাঙালিকে নষ্টালজিক করে তুলেছে। ১৯৫৫ সালে নির্মিত সত্যজিৎ রায়ের পথের পাঁচালী একটা ইতিহাস তৈরী করেছিল। আর সেই ছবির নেপথ্য কাহিনীকে নিয়ে ডকুমেন্টরি তৈরি করেছেন ভূতের ভবিষ্যৎ খ্যাত পরিচালক অনীক দত্ত। সত্যজিৎ পত্নী বিজয়া রায়ের ও এই ছবি তৈরির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান ছিল। তিনি ছবি তৈরির জন্য সত্যজিৎ রায়ের হাতে তাঁর বিয়ের সমস্ত গয়না তুলে দিয়েছিলেন। বিজয়া রায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন সায়নী রায়। এই ছবিতে অপু দূর্গার কাশবনের মধ্যে দিয়ে ট্রেন দেখতে যাওয়া, ইন্দিরা ঠাকরুণ এর মৃত্যু দৃশ্য নিঁখুতভাবে পরিচালক অনীক দত্ত তুলে ধরেছেন এই ছবিতে। মুক্তির প্রথম সপ্তাহেই সুপার হিট এই ছবি। পিছনে ফেলে দিয়েছে কেজিএফ ২ ছবিকেও। আর মহঃবাজার তথা বীরভূমবাসী এই ছবি দেখে যেমন মুগ্ধ, তেমনি তাদের ঘরের মানুষ হরকুমার গুপ্তের অভিনয়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ।