খরায় জ্বলছে জেলা: আমন ধান চাষ অনিশ্চিত, মাথায় হাত জেলার চাষীদের

সনাতন সৌঃ

আষাঢ় মাসের ১০ তারিখ হয়ে গেল। এখনও পর্যন্ত জেলায় বৃষ্টি নেই। অনাবৃষ্টির জেরে আবারও জেলাতে খরা দেখা দিয়েছে। জেলায় যেটুকু বৃষ্টি হয়েছিলো তার থেকে অনেক বেশী চড়া রোদের তাপে মাঠঘাট শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছে। এমনকি নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুর-গড়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। মাছ চাষের দারুন সংকট দেখা দিয়েছে। ধানের জমিতে এখন ছাগল-গরু চড়ছে। জলের অভাবে এখনও বীজতলা তৈরি করা যায়নি। বিশেষ করে অসেচ এলাকায় চাষীদের অবস্থা খুবই সঙ্গীন। এখন জেলাজুড়ে ভ্যাপসা গরম চলছে। প্রচন্ড রোদের তাপে মাঠঘাটে কোনো কাজ করা যাচ্ছে না। জলের অভাবে মাঠের ফসলও শুকিয়ে যাচ্ছে। তবে কবে নাগাদ জেলায় বর্ষা ঢুকবে সেটা নিশ্চিত করে বলতে পারছে না আবহাওয়া দপ্তর। এই প্রসঙ্গে রাজ্যের আবহাওয়া অধিকর্তা সংবাদ মাধ্যমকে জানান যে, বঙ্গোপসাগর থেকে যে জলীয় বাষ্প ঢুকছে তা অনেক উপর দিয়ে যাওয়ার কারণে দক্ষিণবঙ্গে সেভাবে বর্ষার মেঘ তৈরি হচ্ছে না। বঙ্গোপসাগরে কোনো নিম্ন চাপ বা ঘুর্নাবর্ত না হওয়ায় দক্ষিণবঙ্গে বেশি মাত্রায় বৃষ্টি হবে না। আপাতত আগামী চার-পাঁচ দিন বঙ্গোপসাগরে কোনো অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার ইঙ্গিত দেখছেন না আবহাওয়াবিদরা। ফলে দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টির ঘাটতি আরও বাড়বে। যদিও মৌসুমী অক্ষরেখা এখন পশ্চিমবঙ্গের উপকূল হয়ে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত আছে। আর কয়েকদিন পরেই দক্ষিণবঙ্গে কোনো কোনো অঞ্চলে বজ্রগর্ভ মেঘ থেকে বড়জোর বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি হতে পারে। কৃষি মহল মনে করছে, জুন মাস প্রায় শেষ হতে চলল। খরা পরিস্থিতি এভাবে চলতে থাকলে চাষের অবস্থা খুবই খারাপ হবে। গত বছর খুব দেরিতে নামলা বর্ষা হয়েছিল। চাষের সময় পেছিয়ে যায়। জলের অভাবে জেলার বিভিন্ন এলাকায় বহু জমিতে চাষ হয় নি। এবার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ভারী বৃষ্টি না হলে ব্যাপক ক্ষতি হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছে চাষী মহল। চাষের দূরাবস্থা দেখে চাষীদের মাথায় হাত পড়েছে। রাজনগর ব্লকের হরিপুর গ্রামের চাষি দিলীপ কোনাই বলেন, আমাদের এলাকায় সেচের কোনো ব্যবস্থা নেই। সাবমার্সিবল নেই। বৃষ্টির জলের উপর নির্ভর করে চাষ করতে হয়। কয়েক বছর আগেও রথের দিন থেকে ধান পোঁতা শুরু হয়ে যেতো। এখন বর্ষা অনেক পিছিয়ে গিয়েছে। এলাকায় কোনো বৃষ্টি হচ্ছে না। সময়ে ধান পোঁতা হলে ফলন ভালো হতো। জলের অভাবে এখনও জমিতে চাষ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। বীজতলা তৈরি করতে পারছি না। সিউড়ি এক নম্বর ব্লকের কেন্দুলী গ্রামের চাষি রবীন্দ্রনাথ সৌ বলেন, সারের দাম এবং বিদ্যুতের মাশুল অনেক বেড়ে গিয়েছে। শ্রমিকের মজুরীর দামও বেড়েছে। চাষের খরচ যেহারে বাড়ছে তাতে বৃষ্টি না হলে লাভ তো দূরের কথা, ঋণের বোঝা আরও বাড়বে। আগামী দিনে ছেলে-মেয়েরা কী খেয়ে বাঁচবে সে নিয়ে দারুন ভাবনা। কৃষি শ্রমিক হরিলাল বাউড়ী ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, আমাদের গ্রামের পাশ দিয়ে ময়ূরাক্ষী নদী চলে গিয়েছে। এই নদীর জল দূরের জমিতে চাষ হচ্ছে কিন্তু সেচ ব্যবস্থার কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা না থাকায় আমরা এই নদীর জল একফোঁটা সেচের জন্য জল পাচ্ছি না। আমরা তো লোকের জমিতে চাষ করে সংসার চালায়? চাষ না হলে আমরা খাবো কি? জেলা কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে যে, জুন মাসে যে পরিমাণে বৃষ্টির প্রয়োজন ছিল তার থেকে অনেক কম বৃষ্টি হয়েছে। ধান চাষে প্রয়োজনীয় বীজতলা তৈরি করতে পারেন নি জেলার চাষীরা। জেলার নীচু এলাকায় কোথাও কোথাও পাম্প চালিয়ে বীজতলা তৈরি করছে। এ পর্যন্ত জেলায় মাত্র ২ শতাংশ বীজতলা তৈরি হয়েছে। স্বভাবতই, কীভাবে ধান চাষ হবে তা ভেবেই কূলকিনারা পাচ্ছেন না জেলার চাষীরা। এই নিয়ে পরপর তিন বছর বর্ষাকালে বৃষ্টির পরিমাণ কমতে থাকল।যা নিয়ে উদ্বিগ্ন জেলার কৃষি দফতর। পরিস্থিতি মোকাবেলায় কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ, ধান চাষের জন্য এখন সুপার সিডার যন্ত্র উপযুক্ত। এতে চাষের কাজে জল কম লাগে।খরচও কম হয়।
ধান চাষ করার সময় এখনও পেরিয়ে যায় নি। আশা করি এর মধ্যে বৃষ্টি হবে। তাছাড়া কোন পরিস্থিতিতে কী চাষ করতে হয় তা চাষীরা ভালোভাবেই জানেন। তাই চাষে খুব বেশি সমস্যা বলে মনে হয় না। আগামী দিনে অল্প জলে কীভাবে চাষ করা যাবে সেই পদ্ধতি প্রসঙ্গে চাষীদের সচেতন করতে হবে। তবে নিরাশ হলে চলবে না। এব্যাপারে চাষীদের ধর্য্য ধরতে হবে। পরিবেশ পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে কৃষি দপ্তর। প্রচন্ড গরমে জমিতে কাজ করতে গিয়ে ইতিমধ্যে দুজন চাষী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। একজন হলেন রাজনগর ব্লকের অন্তর্গত চন্দ্রপুর পঞ্চায়েতের অধীন কুমকুমা গ্রামের চাষী ছবিলাল হাজরা, বয়স ৫১ বছর। অপর দিকে মল্লারপুর থানার সোঁজ গ্রামের চাষী কাশী ভুঁইমালি, বয়স ৪৪ বছর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *