প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য প্রয়াত: রাজ্যজুড়ে শোকের ছায়া, বীরভূমেও মৌন মিছিল

শম্ভুনাথ সেনঃ

চলে গেলেন পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা সিপিআইএম এর প্রবীণ নেতা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। আজ ৮ আগষ্ট বেলা ৮.২০ মিঃ নাগাদ দক্ষিণ কলকাতার পাম অ্যাভিনিউতে নিজস্ব ভবনে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যু কালে বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। দীর্ঘদিন ধরে তিনি ফুসফুসের সংক্রমণ জনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। তাঁর মৃত্যু সংবাদ নিমেষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তেই রাজ্যজুড়ে নামে শোকের ছায়া। বুদ্ধবাবুর মৃত্যুতে পশ্চিমবঙ্গ সরকার পূর্ণদিবস সরকারি ছুটি ঘোষণা করে। দরিদ্র, শোষিত মানুষের পাশে তিনি ছিলেন অতন্দ্রপ্রহরী।
দলীয় কর্মী সমর্থক এবং সাধারণ মানুষের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য বেলা সাড়ে বারোটা পর্যন্ত তাঁর নিজের বাড়িতে মরদেহ শায়িত রাখা হয়।


বামফ্রন্ট সরকারের প্রাক্তন এই মুখ্যমন্ত্রীর মৃত্যুতে বীরভূম জুড়েও নামে শোকের ছায়া। জেলা সিপিআইএম দলের পক্ষ থেকে তাঁর আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে জেলা জুড়ে শোক মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এদিন সন্ধ্যায় একটি নিঃশব্দ শোকমিছিল সদর সিউড়ি শহর পরিক্রমা করে। সিপিআইএমের সিউড়ি সদর দলীয় কার্যালয় থেকে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের ছবি সম্বলিত ফেস্টুন সহ অর্ধনিমিত দলীয় পতাকা নিয়ে এই মৌন মিছিল মসজিদ মোড়, পৌরসভার রাস্তা ছুঁয়ে সিউড়ি বাসস্ট্যান্ড হয়ে পুনরায় দলীয় কার্যালয়ে এসে শেষ হয়। এই মৌন মিছিলে প্রথম সারিতে ছিলেন প্রবীণ দলীয় নেতা গোকুল ঘোষ, নেত্রী ক্ষমা চৌধুরী, কবিতা রায়, দলের জেলা নেতা বলরাম চ্যাটার্জী, দেবাশীষ গাঙ্গুলী, জেলা কমিটির সদস্য মতিউর রহমান সঙ্গে অগণিত সাধারণ মানুষ ও দলীয় কর্মী সমর্থকরা এই মৌন মিছিলে পা মেলান।


উল্লেখ্য, ১৯৪৪ সালের পয়লা মার্চ উত্তর কলকাতায় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের জন্ম। কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ভাইপো বুদ্ধদেববাবুর স্কুল শিক্ষা শুরু হয় শৈলেন্দ্র সরকার বিদ্যালয়ে। তারপর প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বাংলা অনার্স নিয়ে স্নাতক হন তিনি । শিক্ষকতার কাজে প্রথম তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৬৬ সালে সিপিআইএমের প্রাথমিক সদস্য পদ গ্রহণ করার পরেই খাদ্য আন্দোলনে যোগদান। ১৯৮১ সাল পর্যন্ত দলের যুব শাখা ডিওয়াইএফআইএর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। ১৯৭৭ সালে প্রথম তিনি কাশীপুর -বেলগাছিয়া কেন্দ্র থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হন এবং প্রথম বামফ্রন্ট সরকারের মন্ত্রীসভায় ১৯৮২ সাল পর্যন্ত তিনি তথ্য সংস্কৃতি দফতরের মন্ত্রী ছিলেন। ১৯৮২ এর বিধানসভা নির্বাচনে খুব কম ব্যবধানে ওই কেন্দ্র থেকেই পরাজিত হলেও ১৯৮৭ সালে যাদবপুর কেন্দ্রে জয়লাভ করে পুনরায় বিধায়ক ও মন্ত্রী হন। পরবর্তীতে তিনি তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের মন্ত্রী ছাড়াও স্বরাষ্ট্র ,পুর ও নগর উন্নয়ন দপ্তরের মন্ত্রী ছিলেন। ১৯৯৯ তে তিনি উপমুখ্যমন্ত্রী পদে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন, পরে ২০০০ সালের ৬ নভেম্বর দলের মনোনীত মুখ্যমন্ত্রী পদে আসীন হন। ২০০১ সালে ১৮ মে ত্রয়োদশ বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হয়ে তিনি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। ২০১১ সালের পঞ্চদশ বিধানসভা নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন এবং মুখ্যমন্ত্রীত্বে পদত্যাগ করেন। বুদ্ধদেব বাবুর মৃত্যুতে দলমত নির্বিশেষে রাজ্যের সাধারণ মানুষ তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। দলীয় সূত্রে খবর আগামীকাল ৯ আগষ্ট তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে।

ছবি: মোহাম্মদ আমিন নাশীদ, সিউড়ি: বীরভূম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *