নয়াপ্রজন্ম প্রতিবেদনঃ
২২-২৪ আগস্ট সাঁইথিয়া রবীন্দ্র ভবনে পশ্চিমবঙ্গ লোকসংস্কৃতি ও আদিবাসী সংস্কৃতি কেন্দ্রের উদ্যোগে বীরভূম জেলা তথ্য দপ্তরের আয়োজনে এবং সাঁইথিয়া পৌরসভা ও ভবানীপুর সপ্তপ্রদীপ সাংস্কৃতিক সোসাইটির সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত হলো তিন দিনের জমজমাট ভাদুগানের কর্মশালা। জেলার ৩টি মহকুমা থেকে প্রায় ৫০ জন ভাদুগানের শিল্পী তাঁদের ভাদুগানের দল সহ অংশগ্রহণ করেছিলেন এই কর্মশালায়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাঁইথিয়া পুরসভার সহকারী পুরপিতা কাজী কামাল হোসেন, পুর কাউন্সিলর পিনাকী দত্ত, জেলার সাহিত্য-সংস্কৃতির অঙ্গণের তিন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব ড: আদিত্য মুখোপাধ্যায়, বিজয়কুমার দাস ও ড: উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায় এবং জেলা তথ্য আধিকারিক অরিত্র চক্রবর্তী সহ সাঁইথিয়া পুরসভার কার্যনির্বাহী আধিকারিক, কাউন্সিলর প্রমুখ বিশিষ্টজন। জেলা তথ্য আধিকারিক অরিত্র চক্রবর্তী তাঁর ভাষণে বলেন, বীরভূমের লোকসংস্কৃতির সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে আছে ভাদুগান। তাই সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় সেই ভাদুশিল্পীদের শিল্পে উৎকর্ষতা বৃদ্ধির জন্য এই আয়োজন। উপস্থিত অতিথিরা এই উদ্যোগকে অভিনন্দন জানিয়ে বক্তব্য রাখেন। সপ্তপ্রদীপ এর পক্ষে সুব্রত ঘটক জানান, জেলার অর্ধশতাধিক ভাদুশিল্পী তাঁদের ভাদুগানের দলসহ এই কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেছেন। এই পর্বে ড: আদিত্য মুখোপাধ্যায় ভাদুগানের উদ্ভব ও ভবিষ্যৎ নিয়ে মনোজ্ঞ বক্তব্য রাখেন। দ্বিতীয়ার্ধে বিভিন্ন ভাদুগানের দল ভাদুগান পরিবেশন করেন।
দ্বিতীয় দিনের প্রথম অধিবেশনের শুরু হয় বিজয়কুমার দাসের “ভাদুকথা” নাট্যপাঠের মাধ্যমে। ড: ফাল্গুনি ভট্টাচার্যের কাহিনী অবলম্বনে ভাদুগানের দল নিয়ে লেখা নাটকটি ভাদুশিল্পীদের হৃদয় স্পর্শ করে। দ্বিতীয়ার্ধে নৃত্য প্রশিক্ষক ড: চন্দ্রাবলী ঘোষাল ভাদুশিল্পীদের ভাদুগানের নাচের নানা ভঙ্গি নিয়ে প্রশিক্ষণ দেন। দ্বিতীয় দিন দ্বিতীয়ার্ধে জেলাশাসক বিধান রায় এই কর্মশালায় উপস্থিত হয়ে তাঁর মূল্যবান ভাষণে ভাদুশিল্পীদের উৎসাহিত করে বলেন, ভাদুগানের সঙ্গে বীরভূমের একটা প্রাণের যোগ আছে। জেলায় যাঁরা এই লোকশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার কাজে নিয়োজিত আছেন, তাঁদের উদ্দীপিত করতেই এই আয়োজন সরকারি উদ্যোগে।
তিন দিনের কর্মশালার অন্য আকর্ষণ ছিল বিশিষ্ট ছড়াকার আশিসকুমার মুখোপাধ্যায়ের “নবছন্দে ভাদুগান” বিষয়ে আলোচনা ও বিশিষ্ট গবেষক ড: বাদল সাহার ভাদু উৎসবের উৎস ও ভাদুগান নিয়ে মনোজ্ঞ আলোচনা। শেষ দিনের শেষ পর্বের আকর্ষণ ছিল ভবানীপুর সপ্তপ্রদীপ পরিবেশিত সুব্রত ঘটক নির্দেশিত “বোলান ফিরবে” নাটক। কর্মশালা শেষ হয় তিন দিনের কর্মশালার অভিজ্ঞতা নিয়ে তিন মহকুমার ভাদুশিল্পীদের লেখা ভাদুগান পরিবেশনের মাধ্যমে। ভাদুগানে, নৃত্যে, বাদ্যে, ঢোলের শব্দে, কাঁসির ছন্দে জমে উঠেছিল এই ভাদুগানের কর্মশালা। জেলার বিশিষ্ট ভাদুশিল্পী নাড়ুগোপাল মুখার্জী বললেন, তিন দিনের এই কর্মশালা জেলার ভাদুগানের শিল্পীদের সমৃদ্ধ করেছে। ভাদুশিল্পীদের সংবর্ধনা ও সমবেত ভাদুগানের মাধ্যমে শেষ হয় তিন দিনের কর্মশালা। জেলার বিভিন্ন প্রান্তের বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্টজনেরা তিন দিনই দর্শকের আসনে থেকে রবীন্দ্র ভবন ভরিয়ে রেখেছিলেন। সমগ্র অনুষ্ঠানের আয়োজন ছিল নিখুঁত ও চিত্তাকর্ষক।