শম্ভুনাথ সেনঃ
বাংলার লোকসংস্কৃতির একটি ধারা রাঢ়বঙ্গের ভাদু গান। বীরভূমের গ্রামে গ্রামে সারা ভাদ্রমাস জুড়ে চলছে সেই ভাদু নৃত্য। প্রাসঙ্গিক বিষয়বস্তু নিয়েই সাধারণত ভাদু গান রচিত হয়। উঠে আসে কৃষকের জীবন কথা। কৃষি সংক্রান্ত বিষয়বস্তু নিয়েও গান বাঁধা হয়। এই গানগুলিতে কৃষকের জীবনের আনন্দ-দুঃখ, কৃষি কাজের পদ্ধতি এবং প্রকৃতির সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় উঠে আসে। ভাদুগানের সুর ও কথা সাধারণত সহজবোধ্য। ভাদ্রমাসের এই ভাদু উৎসবের মধ্য দিয়ে আজও বেঁচে আছে বীরভূমের গ্রামীণ সংহতি ও লোকায়ত সংস্কৃতি। জেলার দুবরাজপুর, রাজনগর, মহম্মদবাজার, খয়রাশোল, ময়ূরেশ্বর এই সব এলাকায় সারা ভাদ্রমাস জুড়ে ভাদু নাচে মেতে ওঠেন গ্রামের ভাদুশিল্পীরা। বীরভূমের দুবরাজপুর ব্লকের পণ্ডিতপুর গ্রামে সেই ভাদু নৃত্য ধরা পড়েছে আমাদের ক্যামেরায়। উল্লেখ্য, ভাদু হল “কৃষিলক্ষী”! কৃষিকেন্দ্রিক জনজীবনে এই ভাদ্রমাস যেন অবসরের মাস। মাঠে মাঠে ধান পোঁতা শেষ হলে গ্রামের শ্রমজীবী মানুষরা ভাদুর মৃন্ময়ী মূর্তি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন গ্রামে গ্রামে। প্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে নিজেই গান বাঁধেন ভাদু শিল্পীরা। বাড়ির উঠোনে উঠোনে সেই গান গেয়ে চলে ভাদু নৃত্য। কর্মহীন সময়ে কিছু জীবিকার দিশাও খুঁজে পান। চাল, ডাল,পয়সা দান করেন গেরস্থ বাড়ির লোকজনেরা। আর সে কথায় জানিয়েছেন দুবরাজপুর ব্লকের হালসোত গ্রামের এক ভাদু শিল্পী সন্ধ্যা বাগদি। গ্রামের মা-মেয়েরা সংসারের মঙ্গল কামনায় সিঁদুর দিয়ে বরণ করে নেয় ভাদুর মৃন্ময়ী মূর্তিকে!