পৌষ সংক্রান্তির পুণ্যস্নান উপলক্ষে বীরভূমের ঐতিহ্যবাহী জয়দেব মেলা-২০২৫ শুরু হল

শম্ভুনাথ সেনঃ

সেই পুরনো ঐতিহ্য নিয়ে আজ ১৩ জানুয়ারী থেকে শুরু হল বীরভূমের “জয়দেব মেলা”-২০২৫। বীরভূমের সবচেয়ে প্রাচীন এবং বড় মেলা। এ মেলা এখন বাউল মেলা হিসেবে চিহ্নিত। প্রতিটি আখড়ায় আজ থেকেই বাউলের পাশাপাশি শুরু হয়েছে কীর্তন গান। কবে থেকে এ মেলার উৎপত্তি তা বলা বড় কঠিন! তবে ১৯৮১ সাল থেকে এই জয়দেব মেলা পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছে বীরভূম জেলা প্রশাসন। দ্বাদশ শতকের এক কবিকে নিয়ে এমন ঐতিহ্যবাহী একটি মেলা, যা আজও সমান জনপ্রিয়। আবেগ উৎসাহ আর উদ্দীপনায় আজ থেকেই লক্ষ লক্ষ ভক্ত-পুণ্যার্থীর ঢল নেমেছে কেন্দুলীতে। রাত পোহালেই অজয় নদে শুরু হবে মকরের পুণ্যস্নান। আখড়ায় আখড়ায় বাউল আর কীর্তনের সুরে মুখরিত জয়দেব কেন্দুলির আকাশ বাতাস। উল্লেখ্য, বৈষ্ণব কবি জয়দেব গোস্বামীর তিরোধান দিবস উপলক্ষে অজয় নদীর কূলে বসেছে এই মেলা। সরকারি বাউল মঞ্চে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। লক্ষ্মণ দাস বাউলের উদ্বোধনী সংগীত, সেইসঙ্গে মাঙ্গলিক প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে এই মেলার উদ্বোধন করেন এস আর ডি এর চেয়ারম্যান অনুব্রত মণ্ডল। উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ছোটো, ক্ষুদ্র, মাঝারি উদ্যোগ ও বস্ত্র দপ্তরের মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা সহ বীরভূম জেলা সমাহর্তা বিধান রায়, বীরভূম জেলা সভাধিপতি ফায়জুল হক ওরফে কাজল সেখ, উপাধ্যক্ষ ড. আশিস ব্যানার্জি সহ জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন অধিকারিকরা। এদিন বাউল শিল্পীদের শাল দিয়ে সম্মানিত করা হয়। অন্যদিকে প্রকাশিত হয় “বাউল তীর্থ” নামে একটি স্মারক পত্রিকা।সরকারিভাবে মেলা চলবে ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত। মেলা দর্শনার্থীদের জন্য অস্থায়ী শৌচাগার, পানীয় জলের ব্যবস্থার পাশাপাশি বাড়ানো হয়েছে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা।লাগানো হয়েছে ওয়াচ টাওয়ার, সিসিটিভি ক্যামেরা। অজয়ের তীর জুড়ে মেলা বসলেও হাজার হাজার ভক্ত পুণ্যার্থীর ঢল নেমেছে জয়দেব স্মৃতিবিজড়িত রাধা বিনোদের মন্দিরে। যা এখন “জয়দেব মন্দির” নামে খ্যাত। আজ থেকে ৩৪২বছর পূর্বে ১৬৮৩ খ্রিস্টাব্দে বর্ধমানের মহারাজ কীর্তিচাঁদ বাহাদুর বর্তমান এই মন্দিরটি নির্মাণ করেন। মন্দিরে রয়েছে পোড়ামাটির কাজ। ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া এখন রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে। তৎকালীন পুরোনো ঐতিহ্য ধরে রাখার কারণে তাই সংস্কার হয়নি আজও। কথিত আছে মন্দিরটি জয়দেবের আবাসস্থলে প্রতিষ্ঠিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *