নয়াপ্রজন্ম প্রতিবেদনঃ

বীরভূমের সাঁইথিয়া অভেদানন্দ কলেজে ভাষা বিভাগের উদ্যোগে আজ “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস- ২০২৫” উদযাপিত হয়। মুখ্য বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন কর্মসচিব প্রবীর কুমার সরকার। এছাড়া দিনটির তাৎপর্য তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মানবেন্দ্রনাথ সাহা, হেতমপুর কৃষ্ণচন্দ্র কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. আশিস চক্রবর্তী, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক ডঃ শিবব্রত চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। এদিন অভেদানন্দ কলেজের অন্তত ৩০০ জন ছাত্রছাত্রী এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে। উপস্থিত ছিলেন অভিনন্দন কলেজের অধ্যক্ষ গৌতম সেন পরিচালন সমিতির সভাপতি দেবাশীষ সাহা প্রমুখ।

আজ একুশে ফেব্রুয়ারি। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ভাষা শহীদদের স্মরণে বীরভূমের সিউড়ি সংলগ্ন কড়িধ্যা যদুরায় মেমোরিয়াল অ্যান্ড পাবলিক ইনস্টিটিউশনে আজ যথোচিত শ্রদ্ধায় পালিত হল “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস”। অনুষ্ঠানের শুরুতে শহীদ বেদীতে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করা হয়। ভাষা দিবসের তাৎপর্য সম্পর্কে বক্তব্য তুলে ধরেন বিদ্যালয়েরই বাংলা শিক্ষক পার্থসারথী ঘোষ। বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান যামিনী কান্ত সাহা জানান, মাধ্যমিক পরীক্ষার সেন্টার থাকার দরুন ১০ দিন পর আজ প্রথম বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের পঠন-পাঠন শুরু হল। ছাত্র-ছাত্রীরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের গুরুত্ব যাতে অনুধাবন করতে পারে সে জন্যই এই অনুষ্ঠানের আয়োজন।
ছোট্ট এই অনুষ্ঠানে সম্প্রতি প্রয়াত গীতিকার শ্রদ্ধেয় প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ জ্ঞাপন করা হয়। তার কালজয়ী গান ‘আমি বাংলায় গান গায়’ এর মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষিত হয়। ‘মাতৃভাষা মাতৃদুগ্ধের সমতুল্য’ একথা মাথায় রেখে সমগ্র অনুষ্ঠানটি পরিচালিত হয়।

বীরভূমের ময়ূরেশ্বর চক্রের উলকুণ্ডা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা আজ “অমর একুশে স্মরণে” দিনটি উদযাপন করে। নৃত্য গান, কবিতা পাঠ, বক্তৃতা, নাটিকা এসবের মধ্য দিয়ে সুনীতা কোনাই, রাকিবা, অনুশ্রী, ইয়াসমিন, জুলেখা, আফরিন, সায়েদারা দিনটি পালন করে। কবিতা পাঠ করেন সহশিক্ষক কুণাল ঘোষ, সহশিক্ষিকা মন্দিরা দত্ত, অনিমা মণ্ডল। দিনটি তাৎপর্য ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে তুলে ধরেন প্রধান শিক্ষক সুকুমার গঁড়াই। এদিন বিদ্যালয়ের সকল পড়ুয়ারা ভাষা আন্দোলনের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে সেই সঙ্গে মাতৃভাষার অবমাননা হতে দেবো না বলে সমবেত শপথ গ্রহণ করে।

সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ন্যায় দুবরাজপুর নাগরিক সমিতি পরিচালিত সত্যানন্দ শিশুভারতী বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকেও দিনটি বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে যথাযথ ভাবে পালন করা হয়। এদিন বিদ্যালয়ের কচিকাঁচাদের নিয়ে একটি সুসজ্জিত ট্যাবলো সহযোগে সাদা পোশাকে ছাত্র-ছাত্রীরা মাথায় টুপি, বুকে ব্যাজ সহ বাংলা ভাষায় বিভিন্ন পোস্টার হাতে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করে। পড়ুয়াদের পাশাপাশি বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারা ছাড়াও অভিভাবক অভিভাবিকা, দুবরাজপুর নাগরিক সমিতির পদাধিকারীবৃন্দ, সদস্য ও সদস্যারাও পা মেলান। পরবর্তীতে ভাষা দিবসের গুরুত্ব, বিশেষ করে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন উপস্থিত বিশিষ্ট জনেরা। ভাষা দিবসের অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকেই এদিন সত্যানন্দ শিশুভারতী বিদ্যালয়ের পত্রিকা ‘সৃষ্টি’ প্রকাশিত হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দুবরাজপুর নাগরিক সমিতির কোষাধ্যক্ষ কিশোর আগরওয়াল, সত্যানন্দ শিশুভারতী বিদ্যালয় পরিচালন সমিতির সভাপতি মিতুয়া মিত্র, সহ-সভাপতি ডা: সোমনাথ ধারা, সম্পাদক সন্দীপ মন্ডল, আনন্দ আশ্রমের সম্পাদক পরেশ দাস, সত্যানন্দ শিশু ভারতী বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ শ্রীনূপুর চক্রবর্তী, শিক্ষিকা দেবযানী মণ্ডল প্রাক্তন শিক্ষিকা সুরভী বকশি, শিক্ষক তন্ময় দে প্রমুখ। বিশেষ উল্লেখ্য ভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে সদ্যপ্রয়াত বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী প্রয়াত প্রতুল মুখোপাধ্যায়কে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে তার বিখ্যাত সৃষ্টি ‘আমি বাংলায় গান গাই’ গানটি সমবেত কন্ঠে পরিবেশনের মাধ্যমে আজকের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠান শেষ হয়।

সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে দিনটি নানান কর্মসূচির মাধ্যমে পালন করা হয়। সেরূপ শুক্রবার খয়রাশোল ব্লকের কেন্দ্রগড়িয়া পঞ্চায়েতের পূর্ব বরকোলা বাউরী পাড়ায় বীরভূম জেলাশাসকের পরিচালনায়,জেলার প্রান্তিক অঞ্চলগুলির শিশুদের শিক্ষার সার্বিক মানোন্নয়ন ঘটানোর লক্ষে টুমোরোজ ফাউন্ডেশন ও স্থানীয় দুটি অঙ্গনওয়ারী সেন্টারের উদ্যোগে এলাকার মা, শিশু ও অভিভাবকদের নিয়ে আন্তর্জাতিক ভাষাদিবস উপলক্ষে নানান প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। চেন তৈরী, মোমবাতি প্রজ্জ্বলন, বর্ণের কাটাকুটি, নাচ, গান সহ নানান প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে প্রথম দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানাধিকারী ছাড়াও প্রতিযোগিতায় সকল অংশগ্রহনকারীদের সান্ত্বনা পুরস্কার দেওয়া হয়। উপস্থিত সকলের মধ্যে উৎসাহ উদ্দীপনা ছিল চোখে পড়ার মতো। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন টুমরোজ ফাউন্ডেশনের আনন্দপাঠ ২.০ প্রোগ্রামের খয়রাশোল ব্লকের সুপারভাইজার পূজা কুন্ডু,খয়রাশোল পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অসীমা ধীবর, সংস্থার কমিউনিটি টিচার রিমা মন্ডল ও মাধবী মন্ডল,অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বিমলাংশু শেখর চক্রবর্তী, শিক্ষক সাধন কুমার পান সহ অন্যান্য ব্যাক্তিবর্গ। উল্লেখ্য জেলার সাতটি ব্লক এলাকায় অঙ্গনওয়াড়ী কেন্দ্র সংস্থার পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করা হচ্ছে এবং আনন্দ পাঠ ২.০ প্রোগ্রামটি ১৯ টি ব্লকের প্রতিটি অঙ্গন ওয়াড়ী কেন্দ্রে চলছে বলে জানান সংগঠনের খয়রাসোল ব্লক সুপার ভাইজার পুজা কুন্ডু।

বীরভূমের মুরারই এক নম্বর ব্লকের আইনজীবী এবং দলিল লেখকদের উদ্যোগে আজ “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপিত হয়। অমর শহীদদের স্মরণে একটি শোভাযাত্রা গোটা মুরারই বাজার পরিক্রমা করে। যাতে প্রতিটি অফিসে বাংলা ভাষা প্রাধান্য পায় সেই দাবিতেই এদিন স্লোগান ওঠে। দিনটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেন বিশিষ্ট আইনজীবীরা।