ভারতের ‘অপারেশন সিন্দুর’ পাকিস্তানে: উত্তেজনার নতুন অধ্যায়

নয়াপ্রজন্ম প্রতিবেদনঃ

২০২৫ সালের ৭ মে, ভারতীয় সেনাবাহিনী ‘অপারেশন সিন্দুর’ নামে একটি সামরিক অভিযান চালিয়ে পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরের নয়টি স্থানে বিমান হামলা চালায়। এই অভিযানটি ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পাহালগামে সংঘটিত একটি সন্ত্রাসী হামলার প্রতিশোধস্বরূপ, যেখানে ২৬ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে অধিকাংশই হিন্দু পর্যটক ছিলেন ।

হামলার প্রধান লক্ষ্যবস্তু:

১. সওয়াই নালা ক্যাম্প, মুজাফ্‌ফরাবাদ – এটি ছিল লস্কর-ই-তইয়্যবার একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। ২০২৪ সালের ২০ অক্টোবর সোনমার্গে, ২৪ অক্টোবর গুলমার্গে, এবং ২০২৫ সালের ২২ এপ্রিল পাহালগামে সংঘটিত সন্ত্রাসী হামলাগুলিতে জড়িত জঙ্গিরা এই ক্যাম্পেই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ছিল।

২. সাইয়্যেদনা বিলাল ক্যাম্প, মুজাফ্‌ফরাবাদ – এটি ছিল জইশ-ই-মোহাম্মদের একটি স্টেজিং এলাকা। এটি অস্ত্র, বিস্ফোরক এবং জঙ্গলে টিকে থাকার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহৃত হত।

৩. গুলপুর ক্যাম্প, কোটলি – এটি ছিল লস্কর-ই-তইয়্যবার একটি বেস ক্যাম্প, যা জম্মুর রাজৌরি ও পুঞ্চ এলাকায় সক্রিয় ছিল। ২০২৩ সালের ২০ এপ্রিল এবং ২০২৪ সালের ৯ জুন পুঞ্চে সংঘটিত হামলাগুলিতে জড়িত জঙ্গিদের এই ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল।

৪. বারনালা ক্যাম্প, ভিম্বার – এটি ছিল একটি অস্ত্র পরিচালনা, বিস্ফোরক এবং জঙ্গলে বেঁচে থাকার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।

৫. আব্বাস ক্যাম্প, কোটলি – এখানে লস্কর-ই-তইয়্যবার ফিদায়িনদের প্রস্তুত করা হতো। এই ক্যাম্পে একসাথে ১৫ জন জঙ্গিকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার ক্ষমতা ছিল।

এই স্থানগুলোতে ভারতীয় বিমান বাহিনী ‘প্রিসিশন গাইডেড মিউনিশন’ (PGM) ব্যবহার করে সন্ত্রাসী অবকাঠামো লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে বলে প্রতিরক্ষা সূত্রে জানানো হয়েছে।

ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই হামলাগুলি পাকিস্তানভিত্তিক জইশ-ই-মোহাম্মদ ও লস্কর-ই-তইয়্যবা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলির ঘাঁটি লক্ষ্য করে চালানো হয়েছে। তবে পাকিস্তান দাবি করেছে, হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত ও ৪৬ জন আহত হয়েছেন।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও উদ্বেগ

এই সামরিক উত্তেজনা আন্তর্জাতিক মহলে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয় পক্ষকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন । বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, এই উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পেলে তা একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের রূপ নিতে পারে, বিশেষ করে উভয় দেশের পারমাণবিক অস্ত্রের প্রেক্ষাপটে।

বর্তমান পরিস্থিতি

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে এই সাম্প্রতিক সংঘর্ষ ২০১৯ সালের পর সবচেয়ে গুরুতর সামরিক উত্তেজনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। উভয় দেশই কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন, বাণিজ্য স্থগিত এবং বিভিন্ন চুক্তি বাতিলের মতো পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *