
সেখ রিয়াজুদ্দিনঃ
দীর্ঘ কয়েকমাস যাবৎ দুই স্রোতে বহমান তৃণমূল কংগ্রেসের দুই গোষ্ঠীর কথোপকথনের যবনিকা পড়লো শুক্রবার। অর্থাৎ রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে জেলা ভিত্তিক তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি, চেয়ারম্যান/ চেয়ারপারসন এ নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়। এনিয়ে জেলা জুড়ে শুরু হয়েছে নানান মহলে নানা গুঞ্জন। বীরভূম জেলার ক্ষেত্রে দেখা যায় দীর্ঘদিনের জল্পনার অবসান ঘটিয়ে শেষ পর্যন্ত জেলা কোর কমিটির উপরে ভরসা রাখলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এখানে ৯ সদস্য বিশিষ্ট কোর কমিটি যার মধ্যে রামপুরহাট বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক ডঃ আশিষ ব্যানার্জিকে চেয়ারপারসন মনোনীত করা হয়েছে। বাকি আটজন সদস্যরা হলেন লাভপুর বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক অভিজিৎ সিনহা, অনুব্রত মণ্ডল, সিউড়ি বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী, বোলপুর বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক তথা মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা, জেলা সভাধিপতি তার কাজল সেখ, সুদীপ্ত ঘোষ এবং জেলার দুই সাংসদ শতাব্দী রায় ও অসিত মাল। উল্লেখ্য জেলা রাজনীতিতে অনুব্রত মণ্ডল বনাম কাজল সেখ যুযুধান দুই প্রতিপক্ষ বলে রাজনীতি মহলে পরিচিত। অনুব্রত জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর কোর কমিটির সঙ্গে যুক্ত হয়ে সাংগঠনিক কাজকর্ম করতে বলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখান থেকেই শুরু হয় নতুন করে সংঘাত। সেসময় অনুব্রত মণ্ডল সম্পর্কে কাজল সেখ বলেন কোর কমিটির সদস্য সংখ্যা এক্ষেত্রে একজন বাড়লো। অন্যদিকে কোর কমিটির আহ্বায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী বলেন অনুব্রত মণ্ডল জেলা সভাপতি, কোর কমিটির চেয়ারম্যান। পারস্পরিক বাকবিতণ্ডা থেকে কেউ এক ইঞ্চি সরে আসেনি বরং নিজের নিজের জায়গায় অনড় ছিলেন। পরবর্তীতে ফের নতুন করে সংঘাত দেখা দেয় নির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী জেলা কোর কমিটির মিটিং না হওয়া নিয়ে। আবার কোর কমিটির মিটিং না হতেই জেলা কমিটির মিটিং ডেকে দেওয়ায় ফের বিতর্কের সৃষ্টি এবং জেলা কমিটির মিটিং এ অনুপস্থিত ছিলেন কাজল সেখ। তার একটাই বক্তব্য ছিল মুখ্যমন্ত্রী যেখানে নিজে থেকেই কোর কমিটি গঠন করে দেন। তার মর্যাদা না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এদিকে কোন কিছু তোয়াক্কা না করেই অনুব্রত মণ্ডল স্বমহিমায় তৃণমূল জেলা সভাপতি হিসেবে দাপিয়ে সাংগঠনিক কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন। সম্প্রতি তিনটি মহকুমায় পৃথক পৃথক ভাবে দলীয় কর্মীদের সঙ্গে মিটিং করেন। আগামী ২৫, ২৬ এবং ২৭ তারিখে তিনটি মহকুমায় বিশাল লোকসমাগম করে জনসভার কথাও ঘোষণা করেন। সেই মোতাবেক চলছিল জোর পর্যায়ে প্রস্তুতি। হটাৎ দলীয় পদে রদবদলের ফলে কি হতে পারে? সভাপতি পদ না থাকলেও কি অনুব্রত আগের মতো স্বমহিমায় জেলা দাপিয়ে বেড়াবেন? না কি কোর কমিটির সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করতে হবে? সময় কথা বলবে। কাজল সেখ তার প্রতিক্রিয়ায় ব্যক্ত করেন যে, আশিষ ব্যানার্জি দলের চেয়ারপারসন ছিলেন এবারও আছেন। মুখ্যমন্ত্রী কোলকাতা মিটিং এ সরাসরি ঘোষণা করেন বীরভূম জেলায় কোর কমিটি পরিচালনা করবেন। এটা প্রত্যাশিত ছিল তাই হয়েছে নতুন কিছু নয়। আজকের দিনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক ব্যানার্জিকে নতমস্তকে প্রনাম জানাই কারণ তিনি কোর কমিটির উপরে ভরসা রেখেছেন। ২০২১, ২০২৩ এবং ২৪২৪ এ তিনটি নির্বাচন কোর কমিটি সুশৃঙ্খল ভাবে পরিচালনা করেছেন। কোনো কাটাকাটি, খুনোখুনি, রাহাজানি ছাড়াই দল অভাবনীয় ফলাফল করেছে। যার প্রেক্ষিতে আবার কোর কমিটির উপরে আস্থা রেখেছেন মুখ্যমন্ত্রী। ২০২৬ এর বিধানসভা নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যেকোনো প্রার্থীকে দাড় করাবেন জেলার ১১ টি আসনেই ব্যাপক ভোটের ব্যবধানে জিতবে এবং বিরোধীদের নাস্তানাবুদ করে ছাড়বো।