‘বিল্বমঙ্গল’, যা ‘ভক্ত সূরদাস’ নামেও পরিচিত, বাংলা চলচ্চিত্র ইতিহাসে এক অনন্য স্থান অধিকার করে আছে। এটি ১৯১৯ সালের একটি নির্বাক, সাদা-কালো পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র, যা বাংলা ভাষায় নির্মিত প্রথম ফিচার ফিল্ম হিসেবে স্বীকৃত।
চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেন রুস্তমজি ধোতিওয়ালা (Rustomji Dhotiwala) এবং প্রযোজনা করে কলকাতার অন্যতম প্রাচীন চলচ্চিত্র সংস্থা এলফিনস্টোন বায়োস্কোপ কোম্পানি (Elphinstone Bioscope Company)।

কাহিনি ও পটভূমি
চলচ্চিত্রের কাহিনি রচিত হয় লেখক চাম্পশি উদেশি (Champshi Udeshi)-র একটি গল্পের ওপর ভিত্তি করে। এতে তুলে ধরা হয়েছে মধ্যযুগীয় হিন্দু ভক্ত কবি বিল্বমঙ্গল ঠাকুর বা সূরদাস-এর জীবনগাঁথা।
মূল চরিত্র বিল্বমঙ্গল, একজন ধনবান যুবক, বারাঙ্গনা চিন্তামণি-র প্রেমে পড়ে আত্মবিস্মৃত হয়ে পড়েন। তার এই পতনের পর, এক গভীর অন্তর উপলব্ধির মাধ্যমে তিনি সংসার ত্যাগ করে ভক্তির পথে অগ্রসর হন এবং ঈশ্বরচিন্তায় আত্মনিবেদন করেন।

মুক্তি ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব
- মুক্তির তারিখ: ১ নভেম্বর ১৯১৯
- প্রদর্শনস্থল: কর্নওয়ালিস থিয়েটার, কলকাতা
- চলচ্চিত্রের দৈর্ঘ্য: প্রায় ১২,০০০ ফিট (পূর্ণদৈর্ঘ্যের ফিচার ফিল্ম)
- ইন্টারটাইটেল (সংলাপ/বর্ণনা): বাংলা ভাষায়
এই ছবিটি বাংলা ভাষায় নির্মিত প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র হওয়ায় একে বাংলা সিনেমার ইতিহাসে আদিপর্বের মাইলফলক হিসেবে গণ্য করা হয়।

সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধার
২০১৬ সালে, ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র সংরক্ষণাগার (National Film Archive of India) ফ্রান্সের Cinémathèque Française থেকে ছবিটির একটি আংশিক কপির ফুটেজ উদ্ধার করে।
- উদ্ধারকৃত অংশের দৈর্ঘ্য: ৫৯৪ মিটার
- চলমান সময়কাল: ২৮ মিনিট (১৮ ফ্রেম প্রতি সেকেন্ডে)
যদিও চলচ্চিত্রটির সম্পূর্ণ প্রিন্ট আজ আর অবশিষ্ট নেই, এই পুনরুদ্ধারিত অংশ বাংলা ও ভারতীয় চলচ্চিত্র ইতিহাসের জন্য এক অমূল্য সম্পদ।


অভিনেতা-অভিনেত্রী
- মিস গওহর (Miss Gohur) — চরিত্রে: চিন্তামণি (প্রলোভনস্বরূপা বারাঙ্গনা)
- দোরাবজি মেওয়ালা (Dorabji Mewawala) — চরিত্রে: বিল্বমঙ্গল/সূরদাস
এই দুই চরিত্রের মধ্যে আত্মিক দ্বন্দ্ব ও মুক্তির কাহিনি ফুটে ওঠে।
