নয়াপ্রজন্ম প্রতিবেদনঃ
সম্প্রতি ভারতের মূল ভূখণ্ড ও আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জসহ একাধিক অঞ্চলে খনিজ তেল, লিথিয়াম ও বিরল মৃত্তিকা (Rare Earth Elements – REEs) খনিজের নতুন খনি আবিষ্কৃত হয়েছে। এই আবিষ্কার দেশের জ্বালানি ও প্রযুক্তি খাতে বিপুল সম্ভাবনা তৈরি করেছে এবং বিশ্ব রাজনীতিতেও ভারতের গুরুত্ব বাড়িয়েছে।
কোথায় কোথায় মিলেছে এই সম্পদ?
১. রাজস্থান ও গুজরাট: বারমের ও কচ্ছ বেসিনে খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের বিশাল ভাণ্ডার চিহ্নিত হয়েছে।
২. অন্ধ্রপ্রদেশ ও ঝাড়খণ্ড: এখানে বিরল মৃত্তিকার উৎস পাওয়া গেছে, যা বৈদ্যুতিন যন্ত্রপাতি ও প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
৩. জম্মু-কাশ্মীরের রিয়াসি জেলা: এখানে ৫৯ লক্ষ টনের বেশি লিথিয়ামের খনি আবিষ্কৃত হয়েছে, যা বৈদ্যুতিক গাড়ি ও ব্যাটারি উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ।
৪. আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ: ভারত মহাসাগরের এই দ্বীপপুঞ্জের উপকূলীয় অঞ্চলে খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের বড় মজুতের সম্ভাবনা চিহ্নিত হয়েছে। Geological Survey of India (GSI) এবং ONGC-এর সমীক্ষায় জানা গেছে, এখানকার গভীর সমুদ্রে বিশাল জ্বালানি সম্পদ লুকিয়ে আছে, যা ভবিষ্যতে ভারতের শক্তি নিরাপত্তার জন্য কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আন্তর্জাতিক গুরুত্ব ও ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব
ভারতের এই নতুন খনিজ ও জ্বালানি সম্পদ আবিষ্কারের ফলে:
- চীনের বিরল মৃত্তিকা আধিপত্যে চ্যালেঞ্জ: ভারতের নতুন REE আবিষ্কার চীনের একচেটিয়া সরবরাহ ব্যবস্থাকে ব্যাহত করতে পারে।
- আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে কৌশলগত শক্তি কেন্দ্র: এই দ্বীপপুঞ্জ ভারত মহাসাগর অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় অবস্থিত। এখানে খনিজ তেল আহরণ শুরু হলে সামুদ্রিক প্রতিরক্ষা ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য রুটে ভারতের আধিপত্য আরও বাড়বে।
- পশ্চিমা বিনিয়োগ আকর্ষণ: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও ইউরোপের দেশগুলি ভারতের সঙ্গে বিরল খনিজ ক্ষেত্রে অংশীদার হতে আগ্রহী হবে।
অর্থনৈতিক প্রভাব
- আমদানি নির্ভরতা হ্রাস: নিজস্ব তেল, গ্যাস ও প্রযুক্তি-উপযোগী খনিজের মজুত থাকলে ভারতের বার্ষিক আমদানি ব্যয় অনেকটাই কমবে।
- কর্মসংস্থান ও শিল্পোন্নয়ন: খনিজ আহরণ কেন্দ্রগুলিতে নতুন শিল্প ও চাকরি তৈরি হবে।
- রপ্তানির সম্ভাবনা: অতিরিক্ত খনিজ ও লিথিয়াম বিদেশে রপ্তানি করে রাজস্ব বৃদ্ধি করা যাবে।
পরিবেশগত ও সামাজিক চ্যালেঞ্জ
- আন্দামানের পরিবেশগত স্পর্শকাতরতা: এই দ্বীপপুঞ্জ জীববৈচিত্র্যে ভরপুর এবং আদিবাসী জনগোষ্ঠীর আবাসস্থল। খনিজ আহরণে সঠিক পরিকল্পনা ও পরিবেশ সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকলে বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
- স্থানীয় জনজীবনের প্রভাব: খনি প্রকল্পগুলির ফলে স্থানীয়দের জীবিকা ও সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আসতে পারে। তাদের অধিকার রক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ।
ভারতের মূল ভূখণ্ড ও দ্বীপ অঞ্চলে সদ্য আবিষ্কৃত খনিজ সম্পদ দেশকে এক নতুন যুগে নিয়ে যাচ্ছে। এটি শুধু জ্বালানি নিরাপত্তা নয়, বরং প্রযুক্তি নির্ভর অর্থনীতির দিকে এগিয়ে যাওয়ার শক্ত ভিত তৈরি করছে। তবে এই সম্পদের সদ্ব্যবহার করতে হলে পরিবেশ সংরক্ষণ, স্থানীয় অধিকার ও উন্নয়নকে সমান গুরুত্ব দিয়ে এগোতে হবে।
