বেত দ্বারকা: ইতিহাস, ধর্মীয় গুরুত্ব ও আধুনিক পরিবর্তনের উপাখ্যান

নয়াপ্রজন্ম প্রতিবেদনঃ

গুজরাট রাজ্যের পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত বেত দ্বারকা (Beyt Dwarka), হিন্দু পুরাণ ও ইতিহাসের এক রহস্যময় ও পূণ্যতীর্থস্থান। এটি মূল দ্বারকার প্রায় ৩০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত এবং আরব সাগরের বুকে এক ছোট দ্বীপ হিসেবে পরিচিত। এই দ্বীপটি শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বা ধর্মীয় গুরুত্বের জন্য নয়, মহাভারতের শ্রীকৃষ্ণকথা এবং সমুদ্রগর্ভে লুকিয়ে থাকা প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শনের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

পৌরাণিক পটভূমি

ধারণা করা হয়, বেত দ্বারকা-ই ছিল শ্রীকৃষ্ণের আসল বাসস্থান বা ‘নিবাসস্থান’। মহাভারতে বলা হয়েছে, এখান থেকেই কৃষ্ণ রাজত্ব পরিচালনা করতেন এবং এটি ছিল তাঁর রুক্মিণী ও অন্যান্য স্ত্রীর সঙ্গে বসবাসের স্থান।

কথিত আছে, কৃষ্ণের সখা সুধামা (বা কুসুম) এখানেই কৃষ্ণের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন, এবং সেই কাহিনী আজও লোককথায় জনপ্রিয়।

প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব

বেত দ্বারকার আশপাশের অঞ্চলে সমুদ্রতলে বহু প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধান চালানো হয়েছে। ডুবে যাওয়া প্রাচীন শহরের ধ্বংসাবশেষ, প্রাচীন নোঙর, পোড়ামাটির বাসন ও পাথরের নির্মাণ খণ্ড প্রমাণ করে যে এটি এক সমৃদ্ধ সভ্যতার কেন্দ্র ছিল। অনেক ইতিহাসবিদ মনে করেন, এটি হতেই পারে প্রাচীন দ্বারকা নগরীর একটি অংশ।

দর্শনীয় স্থান

বেত দ্বারকায় রয়েছে বহু গুরুত্বপূর্ণ মন্দির, যার মধ্যে অন্যতম:

  • শ্রী কৃষ্ণ মন্দির (দ্বারকাধীশ মন্দির) : যেখানে কৃষ্ণের রাজারূপে পূজা হয়।
  • হনুমান দন্ডি মন্দির: এটি এমন এক জায়গা যেখানে হনুমান ও মকরধ্বজের মিলন ঘটেছিল বলে মনে করা হয়।
  • শঙ্করাচার্য স্থল: ভারতবর্ষের চারধামে যিনি প্রতিষ্ঠা করেন, সেই আদিগুরু শঙ্করাচার্য এই স্থানেও এসেছিলেন বলে বিশ্বাস।

যাত্রাপথ

বেত দ্বারকা যেতে হলে প্রথমে পৌঁছাতে হয় ওখা বন্দর-এ। সেখান থেকে নৌকা বা ফেরির মাধ্যমে ১৫–২০ মিনিটে পৌঁছানো যায় দ্বীপে। দ্বীপটি ছোট হলেও অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন এবং সৌম্য পরিবেশে পূর্ণ। তবে সম্প্রতি এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান হিসেবে নির্মিত হয়েছে সুদর্শন সেতু” – যা ভারতের অন্যতম দীর্ঘ সমুদ্র-সেতু হিসেবেও পরিচিত।

পর্যটনের জন্য আকর্ষণ

ধর্মীয় গুরুত্ব ছাড়াও বেত দ্বারকার স্ফটিকস্বচ্ছ জল, ধবধবে বালির সৈকত এবং নির্জন প্রাকৃতিক পরিবেশ ভ্রমণপিপাসুদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয়। এখানে ভোরের সূর্যোদয় ও সন্ধ্যার আরতি একটি অপার্থিব অভিজ্ঞতা।

বেত দ্বারকা শুধুমাত্র একটি তীর্থস্থান নয়—এটি ভারতের অতীত, ধর্ম, পুরাণ, ইতিহাস ও সভ্যতার মেলবন্ধনের এক অপূর্ব নিদর্শন। যে কেউ একবার এই দ্বীপে পা রাখলে অনুভব করতে পারেন এক অলৌকিক শান্তি ও ঐতিহ্যের স্পর্শ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *