
শম্ভুনাথ সেনঃ
জন্মদিনে কোন আড়ম্বরতা নেই! শুধুমাত্র তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা এবং স্মৃতিচারণার মধ্য দিয়ে ১৩৯ তম জন্মদিন পালিত হল ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সেই মহীয়সী বিপ্লবী বীরভূমের দুকড়িবালা চক্রবর্তীর। আজ তাঁর বাড়িতেই বসানো আবক্ষ মূর্তিতে মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান নাতি পার্থসারথী চক্রবর্তী ও তাঁর পরিবার পরিজনেরা।
উল্লেখ্য, এই দুকড়িবালা দেবী জন্মেছিলেন ১৮৮৭ খ্রী:২১ শে জুলাই, বীরভূমের নলহাটি থানার ঝাউপাড়া গ্রামে। পিতা ছিলেন নীলমণি চট্টোপাধ্যায়, মা কমলকামিনী দেবী। মাত্র ১১ বছর বয়সে গ্রামেই ফনিভূষণ চক্রবর্তীর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। সেদিনের সেই ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন এই গৃহবধূ। বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহণ করেন। বীরভূমের এই দুকুড়ি বালা চক্রবর্তী পরাধীন ভারতে অস্ত্র আইনে দণ্ডিতা প্রথম মহিলা। তাঁর বাড়ি হয়ে উঠেছিল স্বাধীনতা সংগ্রামীদের গোপন ডেরা। বিপ্লবী দলে তিনি ‘মাসীমা’ নামে পরিচিত ছিলেন। উল্লেখ্য, ১৯১৪ সালে কলকাতায় বিপ্লবী বিপিনবিহারী গঙ্গোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে রডা কোম্পানীর মাউজার পিস্তল ও কার্তুজের ৫০ টি বাক্স লুট হয়। তাঁর বোনপো বিপ্লবী নিবারণ ঘটকের মাধ্যমে সাতখানি মাউজার পিস্তল ও কার্তুজ নিজের হেফাজতে লুকিয়ে রাখেন দুকড়িবালা। বিট্রিশ পুলিশ খবর পেয়ে ৮ জানুয়ারি ১৯১৭ সালে দুকড়িবালার বাড়ি তল্লাশি চালিয়ে তা উদ্ধার করে। এবং গ্রেপ্তার হন তিনি।
কোলের শিশুকে ফেলে তাঁকে জেলে যেতে হয়। বছর দুয়েক পর তিনি জেল থেকে মুক্তি পান। তবে এখনো পর্যন্ত এই মহীয়সীর স্মৃতি রক্ষার্থে সরকারের পক্ষ থেকে তেমনভাবে কোনো বড় উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এই বিপ্লবী দুকড়িবালা দেবীর প্রতি যোগ্য সম্মান না জানানোয় আক্ষেপ ও অনুশোচনা জানিয়েছেন তাঁর উত্তরসুরিরা। শুধুমাত্র চক্রবর্তী পরিবারের দানকৃত জায়গায় তাঁদের স্মৃতি রক্ষার্থে নির্মাণ হয়েছে “দুকড়িবালা ও নিবারণ ঘটক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়”। দাবি উঠছে সোনারকুণ্ডু-ঝাউপাড়া পাকা পিচ রাস্তাটির নামকরণ হোক দুকড়িবালা সরণি। বাসস্ট্যাণ্ডে বসানো হোক অগ্নিকন্যার একটি আবক্ষ মূর্তি। বিস্মিতপ্রায় এই দুকড়িবালার আত্মত্যাগ ও অবদানের কথা নতুন প্রজন্মকে জানান দিতে বিপ্লবীদের পদধূলিতে ধন্য এই ঝাউপাড়া গ্রামে গড়ে উঠুক বিপ্লবীদের স্মৃতি প্রদর্শনী সংগ্রহশালা। নয়াপ্রজন্মের পক্ষ থেকে তাঁর ১৩৯ তম জন্মদিনে বিনম্র শ্রদ্ধা।