বাঙালিদের উপর নির্যাতনের প্রতিবাদে রাজ্যজুড়ে মিছিলের হুঁশিয়ারি, ২৭-২৮ জুলাই বীরভূম সফরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা

নয়াপ্রজন্ম প্রতিবেদনঃ

মঙ্গলবার নবান্নে এক সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন, বাংলা ভাষাভাষী মানুষের উপর দেশের অন্যান্য রাজ্যে যে অবিচার চলছে, তার প্রতিবাদে তিনি রাজ্যের জেলাগুলিতে সফরের সময় ভাষা-সন্ত্রাস বিরোধী মিছিলে নেতৃত্ব দেবেন।

তিনি বলেন, “যেখানেই যাব, ভাষা-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিলে অংশ নেব। পরিকল্পনা অনুযায়ী সব কিছু চললে, ২৭ ও ২৮ জুলাই বীরভূম যাব। সেখানেও মিছিল করব, পাশাপাশি বৈঠক করব ও কয়েকটি সেতুর উদ্বোধনও করব।”

তৃণমূল কংগ্রেসের বীরভূম জেলা সূত্রে জানা গেছে, মুখ্যমন্ত্রীর মিছিলের সঠিক সময় ও স্থান এখনও চূড়ান্তভাবে জানানো হয়নি, তবে অনুমান করা হচ্ছে ২৮ জুলাই বোলপুরে এই মিছিল অনুষ্ঠিত হতে পারে।

তবে মুখ্যমন্ত্রীর এই সফরের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে দেওচা-পাঁচামি কয়লা খনি প্রকল্প ঘিরেও। সূত্রের খবর, প্রায় এক হাজার বড় গাছ স্থানান্তর করা হয়েছে এবং বাসল্ট খননের কাজ ইতিমধ্যেই সফলভাবে এগোচ্ছে। যদিও মুখ্যমন্ত্রীর দেওচা সফরের চূড়ান্ত সময়সূচি এখনো নবান্ন থেকে নিশ্চিত করা হয়নি।

তৃণমূলের একাধিক সূত্র জানাচ্ছে, বিজেপির বিরুদ্ধে ‘বাংলা ও বাঙালি’ ইস্যুতে রাজনৈতিক সুর চড়াতে জেলায় জেলায় কর্মসূচির পরিকল্পনা করেছেন মমতা। এই বিষয়ে দল ইতিমধ্যেই নিচুতলার নেতা-কর্মীদের সক্রিয় করেছে।

২১ জুলাইয়ের ভাষণে মমতা দলীয় কর্মীদের প্রতি নির্দেশ দেন, প্রতি সপ্তাহের শেষ দিন অর্থাৎ সপ্তাহান্তে ব্লকস্তরে ছোট ছোট পথসভা ও প্রতিবাদ কর্মসূচি করার জন্য, যাতে বাঙালি পরিচিতির ইস্যুতে রাজ্যজুড়ে বিজেপির বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করা যায়।

সূত্রের মতে, বীরভূম থেকেই শুরু হবে মুখ্যমন্ত্রীর এই জেলাভিত্তিক সফর, যা দুর্গাপুজোর আগে রাজ্যের প্রতিটি জেলায় পৌঁছানোর লক্ষ্যে করা হচ্ছে। সেখানে প্রশাসনিক সভার পাশাপাশি রাজনৈতিক বার্তা পৌঁছে দেওয়াও অন্যতম উদ্দেশ্য।

কলকাতার এক তৃণমূল শীর্ষনেতা বলেন, “২০২১ সালের নির্বাচনের সময় বিজেপিকে বহিরাগত বলে প্রচার করেই আমরা সাফল্য পেয়েছিলাম। এবার বাংলাভাষী মানুষদের উপর নির্যাতনের অভিযোগ আরও বেশি প্রভাব ফেলবে বলেই মনে হচ্ছে। বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে কাজ করতে যাওয়া শত শত অভিবাসী শ্রমিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এমনকি অন্তত সাতজনকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছিল, যাদের পরে রাজ্য সরকারের চাপে ফেরত আনা হয়।”

তৃণমূলের এক সূত্র জানিয়েছে, ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের সময় যে ‘অবাঙালি ও বাঙালির’ দ্বন্দ্বের বক্তব্য দল তুলে ধরেছিল, তা ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনেও বজায় রাখা হয়। বিশেষ করে মোদি সরকারের পক্ষ থেকে বাংলার প্রাপ্য অর্থ আটকে রাখার বিষয়টি রাজনৈতিকভাবে বিজেপিকে কোণঠাসা করে তোলে। ফলস্বরূপ, বিজেপির আসন ২০১৯-এর তুলনায় ছয়টি কমে ১২-তে নেমে আসে।

এই ইস্যুকে সামনে রেখে তৃণমূল এখন দিল্লিতেও ভাষা রাজনীতির কৌশল নিচ্ছে। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে দুই কক্ষেই সব সাংসদদের বাংলা ভাষায় কথা বলার নিদান দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে, বিজেপির রাজ্য সভাপতি সমিক ভট্টাচার্য জানান, infiltrator শনাক্ত ও বহিষ্কারের প্রক্রিয়া সব রাজ্যেই চলছে। তিনি বলেন, “এক-দু’টি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটতে পারে, তবে কোথাও কোনও নির্যাতনের অভিযোগ নেই। সমস্ত রাজ্যেই অনুপ্রবেশকারী ও রোহিঙ্গাদের চিহ্নিত করে ফেরত পাঠানোর নীতিতে কাজ শুরু হয়েছে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *