অগাস্টে ক্যাম্পাস খুলছে পর্যটকদের জন্য: বিশ্বভারতীর এক অভিনব উদ্যোগ

নয়াপ্রজন্ম প্রতিবেদনঃ

শান্তিনিকেতন তথা বিশ্বভারতী পরিদর্শনে আগ্রহী দেশ-বিদেশের পর্যটকদের জন্য সুখবর। আগামী অগাস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে প্রতি রবিবার পর্যটকদের জন্য ‘বিশেষ ব্যাচ’-এর মাধ্যমে বিশ্বভারতীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান ঘোরানোর ব্যবস্থা চালু হচ্ছে। শান্তিনিকেতনের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব তুলে ধরতেই বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ এই উদ্যোগ নিয়েছে।

প্রতি রবিবার ২৫ জন করে একটি পর্যটক ব্যাচ ক্যাম্পাস পরিদর্শনে অংশ নিতে পারবে। প্রতি দিনে চারটি ব্যাচ প্রবেশ করতে পারবে—সকাল ১০টা, সাড়ে ১১টা, দুপুর ১টা ও সাড়ে ৩টায়। ব্যাচভিত্তিক এই ক্যাম্পাস ট্যুরে পর্যটকদের জন্য থাকছে বিশেষ নির্দেশনা ও পর্যাপ্ত গাইডের সহায়তা।

পর্যটকদের জন্য ক্যাম্পাসের মধ্যমঞ্চ, চিত্রভবন, পাঠভবন, ছাতিমতলা, উপাসনা গৃহ, রবীন্দ্রভবন, বিশ্বভারতী সংগ্রহশালা, উদয়নে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বসবাসের ঘর, আম্রকুঞ্জ ও ঊষা ভবন ঘোরার সুযোগ থাকবে। প্রতিটি স্থানেই পর্যটকরা গাইডের মাধ্যমে ঐতিহাসিক তথ্য জানতে পারবেন। আপাতত কলাভবন ও সঙ্গীতভবনের দিকে যাওয়ার অনুমতি মিলবে না। তবে ভবিষ্যতে ওই দুই বিভাগও অন্তর্ভুক্ত করা হবে পর্যটন রুটে।

টিকিটের মূল্য ও প্রক্রিয়া

বিশ্বভারতী পর্যটকদের জন্য এবার থেকে নির্ধারিত হল টিকিটের মূল্য। সাধারণ পর্যটকদের ক্ষেত্রে মাথাপিছু ৩০০ টাকা ধার্য করা হয়েছে। তবে পড়ুয়া ব্যাচের ক্ষেত্রে টিকিট মূল্য ৫০ টাকা, একক ছাত্রছাত্রীদের জন্য ১৫০ টাকা এবং বিদেশি পর্যটকদের জন্য ১০০০ টাকা ধার্য হয়েছে।

পর্যটকদের জন্য লিফলেট দেওয়া হবে, যেখানে বাংলায়, ইংরেজিতে ও হিন্দিতে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করা থাকবে। প্রতিটি পড়ুয়া ব্যাচের সঙ্গে থাকবেন বিশ্বভারতীর নিজস্ব প্রশিক্ষিত গাইড, যাঁরা ক্যাম্পাসের ইতিহাস ও বিশেষত্ব ব্যাখ্যা করবেন।

এছাড়া, রুটের দুটি নির্দিষ্ট জায়গায় থাকবে জল ও চা-জলের ব্যবস্থা। পরিক্রমা চলাকালীন কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁর জন্য থাকবে অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবাও।

টিকিট কোথায় পাওয়া যাবে?

বিশ্বভারতীর রবীন্দ্রভবন থেকেই পর্যটক ব্যাচের টিকিট সংগ্রহ করা যাবে। অনলাইন বুকিং চালু হবে নভেম্বর-ডিসেম্বরের মধ্যে।

শিক্ষার্থীদের জন্য ছাড়

বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ জানায়, দেশ-বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আগত ছাত্রছাত্রীদের গবেষণার স্বার্থে বিশেষ অনুমতির মাধ্যমে ক্যাম্পাস পরিদর্শনের অনুমতি দেওয়া হবে। তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে।

বিশ্বভারতীর মুখপাত্র জানিয়েছেন, “শান্তিনিকেতনকে বিশ্বের দরবারে আরও গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরার লক্ষ্যে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এটি পর্যটকদের অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ করবে এবং একই সঙ্গে বিশ্বভারতীর গৌরবময় ইতিহাসের সঙ্গে তাদের পরিচয় ঘটাবে।”ন, ঘন্টাতলা, চৈতিবাড়ি, চিনাভবন, হিন্দিভবন, আম্রকুঞ্জের জহরবেদী ছাড়াও শান্তিনিকেতনের কিছু প্রাচীন গৃহ এবং অবশ্যই ঐতিহ্যবাহী উপাসনাগৃহ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, এই হেরিটেজ ওয়াক পর্যটকদের জন্য শুধুমাত্র শিক্ষা বা দর্শনের সুযোগ নয়, বরং এটি শান্তিনিকেতনের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে এক আবেগঘন সংযোগ তৈরি করবে।

নান্দনিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও রক্ষণাবেক্ষণ

হেরিটেজ ওয়াক সফল করতে ইতিমধ্যেই রাস্তা সংস্কার, সৌন্দর্যায়ন এবং গাছপালা পরিচর্যার কাজ শুরু হয়েছে। পুরনো পেভমেন্ট মেরামত করা হয়েছে এবং নতুন পথ নির্মাণের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।

বিশ্বভারতীর প্রাক্তন উপাচার্য সঙ্গীতনারায়ণ ঘোষ এই উদ্যোগকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, “এই পরিকল্পনা শান্তিনিকেতন দর্শনের অভিজ্ঞতাকে আরও অর্থবহ করে তুলবে। পর্যটনের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।”

বিশ্বভারতীর হেরিটেজ ওয়াকের এই ট্রায়াল শুধুমাত্র দর্শনার্থীদের জন্য নয়, বরং শান্তিনিকেতনের ইতিহাস, সাহিত্য, স্থাপত্য, শিল্প ও সংস্কৃতির প্রতি গভীর সম্মান প্রদর্শনের এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এটি পর্যটকদের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের জন্যও শিক্ষামূলক এবং অন্তর্মুখী উপলব্ধির সুযোগ করে দেবে। এই উদ্যোগ সফল হলে আগামী দিনে এটি শান্তিনিকেতনের অন্যতম আকর্ষণ হয়ে উঠবে, যা প্রতিদিনের ভ্রমণ ও শিক্ষা—দুইয়ের সঙ্গেই যুক্ত থাকবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *