শম্ভুনাথ সেনঃ
ভারতের জাতীয় পতাকা উড়লো সুদূর আমেরিকার মাটিতে। “স্পেশাল অলিম্পিক ইউনিফায়েড কাপ-২০২২” মহিলা ফুটবল প্রতিযোগিতায় ভারত পেয়েছে ব্রোঞ্জ পদক। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন খেলোয়াড়দের নিয়ে ১৫ জনের একটি ভারতীয় দল এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। পশ্চিমবঙ্গ থেকে দলে খেলার সুযোগ পায় ৩ জন। তার মধ্যে বীরভূম থেকে একমাত্র পাপিয়া মুর্মু। বাকি ২ জন হাওড়ার। ভারতীয় এই দলে খেলোয়াড় তথা কো ক্যাপটেন হিসেবে নেতৃত্ব দিয়েছে বীরভূমের এই আদিবাসী তরুণী পাপিয়া। সে এখন সিউড়ি বিদ্যাসাগর কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের কলা বিভাগের ছাত্রী। বাড়ি সিউড়ি সংলগ্ন নগরী গ্রাম পঞ্চায়েতের ‘কাঁটাবুনী’ গ্রামে। ছোটবেলা থেকেই স্বল্প বুদ্ধিসম্পন্ন পাপিয়ার কথা বলায় প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। তাসত্ত্বেও শারীরিক অক্ষমতা উপেক্ষা করে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন পাপিয়া আমেরিকার মাটিতে ফুটবলে ব্রোঞ্জ জয়ে দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছে। এ বড় গর্বের ব্যাপার। নিম্নবিত্ত, খেটে খাওয়া তপশিলি উপজাতি পরিবার থেকে উঠে এসেছে পাপিয়া। বাড়িতে রয়েছে মা-বাবা এক দিদি। চাষবাসের উপরেই দিন যাপন। বাবা শিবলাল মুর্মু চাষের কাজে যুক্ত। রয়েছে একটি ছোট মুদিখানা দোকান। দিদি দেবী মুর্মুও গ্রাজুয়েট ডিগ্রি নিয়েছে। সারা বিশ্বে সবচেয়ে প্রাচীন খেলার নাম “ফুটবল”। পাপিয়া খুব ছোটবেলা থেকে ফুটবল খেলাটাকে ভালোবেসে ফেলে। প্রথমে গ্রামের মাঠে খেলাধুলা। তারপর জেলা স্তরে, রাজ্য স্তরে খেলাধুলার পর সে পৌঁছে যায় বিদেশের মাটিতে। ভারতকে এনে দিয়েছে ব্রোঞ্জ পদক। তাঁর গর্বে গর্বিত সারা বীরভূমবাসী। পাপিয়া জানিয়েছে এই আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের পিছনে সর্বতোভাবে সাহায্য করেছে “জেলা সমগ্র শিক্ষা মিশন”। পাসপোর্ট তৈরি, পরামর্শ, খেলার সরঞ্জাম ক্রয়, যাতায়াত খরচ এমনকি দমদম বিমানবন্দরে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছে জেলা সমগ্র শিক্ষা মিশন, —এ তথ্য জানিয়েছেন সমগ্র শিক্ষা মিশনের জেলা কো-অর্ডিনেটর তথা স্পেশাল অলিম্পিকের পশ্চিমবঙ্গের স্পোর্টস ডাইরেক্টর শুকদেব চক্রবর্তী। পাপিয়ার সাফল্যের পিছনে ফুটবল কোচ মৃণাল মালের অবদান অনস্বীকার্য। ছোটবেলা থেকে ফুটবলে তালিম দিয়ে সাহায্য করেছে অজয়পুর হাইস্কুলের শিক্ষক এই মৃনালবাবু। ৯ নম্বর জার্সি পরে বিদেশের মাটিতে কো-ক্যাপ্টেন হিসেবেই খেলতে নামে পাপিয়া। সুদুর আমেরিকা থেকে ফোনে পাপিয়া জানায় “বিদেশের মাটিতে খেলতে এসে খুব ভালো লাগছে। কোনোদিন ভাবিনি বীরভূম থেকে এখানে খেলার সুযোগ পাবো। আমেরিকায় অনুশীলনের সময় অনেক কিছু শিখতে পেরেছি। শ্রীলঙ্কাকে ১২ গোলে হারিয়ে ভারতকে তৃতীয় স্থানে পৌঁছে দিতে পেরেছি, ৭ টি গোল করেছি আমি নিজেই”। পাপিয়ার এই সাফল্যের সংবাদে আনন্দিত বীরভূম জেলা প্রশাসন। বীরভূম জেলা পরিষদের সভাধিপতি তথা সিউড়ির বিধায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী ভারতের ব্রোঞ্জ জয়ে সাধুবাদ জানিয়েছে জেলার মেয়ে পাপিয়াকে। পাপিয়ার সাফল্যের প্রশংসা করেছেন বীরভূম জেলা সমাহর্তা বিধান রায়। তাঁর খেলাধুলার চর্চায় সব রকমের সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন জেলা শাসক।মেয়ের এই সাফল্যে গর্ব প্রকাশ করেছে বাবা শিবলাল মুর্মু, মা বালিকা মুর্মু। গর্বিত জেলা সমগ্র শিক্ষা মিশন, ছাত্রীর গর্বে উল্লসিত সিউড়ী বিদ্যাসাগর কলেজ। গত ১৫ আগস্ট সিউড়ি বিদ্যাসাগর কলেজে পাপিয়ার হাত ছুঁয়ে এবার জাতীয় পতাকা উত্তোলিত হয়েছে। উল্লেখ্য, ১-৭ আগষ্ট, ২০২২ আমেরিকার মিশিগান প্রদেশে ডেট্রয়েট শহরে অনুষ্ঠিত হয় এই “ইউনিফায়েড ফুটবল” প্রতিযোগিতা। এই প্রতিযোগিতায় ভারত ছাড়াও নামিবিয়া, শ্রীলঙ্কা, সংযুক্ত আরব আমিরশাহী, গুয়েতমালা, মেক্সিকো, কোস্টারিকা, আমেরিকা সহ ২০টি দেশ অংশ নেয়। প্রথম স্থান পেয়ে সোনা জয় করে নামিবিয়া। সংযুক্ত আরব আমির শাহী দ্বিতীয় স্থানে, পেয়েছে রুপো। তৃতীয় স্থানে থাকা ভারত পেয়েছে ব্রোঞ্জ পদক। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় ভারতের এই ব্রোঞ্জ জয়ে বীরভূমের মুখ উজ্জ্বল করেছে পাপিয়া। পাপিয়া এখন ভারতের গর্ব।