৫ সেপ্টেম্বর “শিক্ষক দিবসে” বীরভূমে দুজন শিক্ষক পাচ্ছেন “শিক্ষারত্ন” পুরস্কার

শম্ভুনাথ সেনঃ

রাত পোহালেই “শিক্ষক দিবস”। ৫ সেপ্টেম্বর দিনটি আরো পাঁচটা দিনের থেকে আলাদা একটি দিন। ১৩৪ বছর পূর্বে যে মানুষটি জন্মেছিলেন শিক্ষক-দার্শনিক ড. সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ, তাঁর জন্মদিনটিকে স্মরণীয় করতে তাঁর জীবনকাল থেকেই “শিক্ষক দিবস” উদযাপিত হয়। তিনি ছিলেন স্বাধীন ভারতের প্রথম উপরাষ্ট্রপতি (১৯৫২-১৯৬২) এবং দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি (১৯৬২-১৯৬৭)। প.ব. রাজ্য সরকারের শিক্ষা দপ্তরের পক্ষ থেকে এবারেও এই দিনটিতে রাজ্যের শিক্ষকদের সম্মাননা “শিক্ষারত্ন” পুরস্কার প্রদান করা হবে। এবার রাজ্যে মোট ৬১ জন পাচ্ছেন এই সম্মাননা। মাধ্যমিক স্তরে ২৩ জন, মাদ্রাসা শিক্ষক ২ জন, প্রাথমিক শিক্ষক ১৫ জন, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ জন অধ্যাপক। এই তালিকায় বীরভূমে দুজন শিক্ষক পাচ্ছেন এই “শিক্ষারত্ন” পুরস্কার। গত ৩০ আগস্ট ইমেলে তাঁদের চিঠি এসে পৌঁছেছে। আগামীকাল ৫ সেপ্টেম্বর বেলা ১১ টায় বীরভূম জেলাশাসকের দপ্তর সদর সিউড়িতে তাঁদের হাতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই সম্মাননা তুলে দেওয়া হবে।
শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতস্বরূপ এই পুরস্কার পাচ্ছেন দুবরাজপুর আর.বি.এস.ডি হাইস্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক ড. নীলমাধব নাগ। তাঁর বাড়ি ময়ূরেশ্বর ২ নম্বর ব্লকের কলেশ্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের ‘মাঠবহড়া’ গ্রামে। ১৯৯০ সালে তিনি দুবরাজপুর আরবিএসডি হাই স্কুলে বাংলা শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি একাধিক পত্র-পত্রিকায় তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়েছে। নয়াপ্রজন্ম পত্রিকাতেও তার গবেষণামূলক লেখা সম্প্রচারিত হয়। এই বিদ্যালয়েই তিনি দু বছর ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন। বীরভূমের আঞ্চলিক ভাষার বৈশিষ্ট্য নিয়ে তাঁর গবেষণামূলক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। স্কুল ছুট ছাত্রদের স্কুলমুখী করার তাঁর প্রয়াস নজিরবিহীন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে সরকারি সুযোগ-সুবিধার কথা জানিয়েছেন ছাত্রের অভিভাবকদের কাছে। দীর্ঘ ৩২ বছর শিক্ষকতা জীবনের পর, সরকারি স্বীকৃতির এই খবরে খুব ভালো লাগছে বলে তিনি জানিয়েছেন। এই সংবাদে তাঁর নিজের স্কুল তথা দুবরাজপুরে শিক্ষক মহলে খুশির হাওয়া।

অন্যদিকে এই বীরভূমের মুরারই ২ নম্বর ব্লকের পাইকর চক্রে দাঁতুড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনসারুল হক পাচ্ছেন শিক্ষারত্ন সম্মাননা। ১৯৯৭ সালে তিনি প্রথম হিয়াতনগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাত্র ২০ বছর বয়সে শিক্ষকতার কাজে যোগদান করেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি তাঁর নজিরবিহীন সমাজ ভাবনা। “শিক্ষক মানুষ গড়ার কারিগর”। তেমন নজির গড়েছেন আনসারুলবাবু।এক প্রতিভাবান দুঃস্থ ছাত্রকে খলৎপুর আলআমিন মিশনে নিজের তত্ত্বাবধানে ভর্তি করা ও পড়াশোনা করানোর দায়িত্ব নেন। সেই ছাত্র ডাঃ সাবির মোল্লা বর্তমানে শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে জঙ্গিপুর হাসপাতালে কর্মরত। করোনা অতিমারিতে গত দু’বছর ঘরবন্দি থাকার কারণে বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা পড়াশোনায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। খেলার মাধ্যমে পাঠদান জেলার বুকে তাঁর এক নতুন কর্মসূচি। করোনা সচেতনতায় সামাজিক স্বীকৃতি স্বরূপ জেলা পুলিশের কাছ থেকেও তিনি পেয়েছেন বিশেষ সন্মাননা। শিক্ষারত্ন পুরস্কার পেয়ে সমাজের প্রতি তাঁর দায়বদ্ধতা আরো বেড়ে গেল বলে দুরভাষে জানিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *