
শম্ভুনাথ সেনঃ

সারা দেশের সাথে আজ ২৪ মার্চ শুক্রবার রমজানের রোজা প্রতিপালন শুরু হয়েছে বীরভূমেও। রমজানের প্রথম দিনেই সন্ধ্যায় সারা আকাশ জুড়ে এক বিরল দৃশ্য পরিলক্ষিত হয়। এদিন সন্ধ্যায় চাঁদের নিচে গা ঘেঁষে উজ্বল একটি তারার উপস্থিতি। সেই বিরল ছবি দেখতে সন্ধ্যার আকাশে চোখ রাখে সকল ধর্মাবলম্বী মানুষ। এই দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করেছে অনেকেই। আসলে এই রমজান মাসে একটানা ৩০ দিন রোজা বা উপবাসব্রত মুসলিমদের এক পালনীয় পবিত্র কর্তব্য।আরবী সালের ‘রমজান’ হচ্ছে নবম মাস। এই মাসে সৎ কাজের পূণ্য ৭০ গুণ বেশি হয় বলে আজও মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের কাছে দৃঢ় বিশ্বাস। তাই এই মাস ত্যাগ-সংযম, ধর্মীয় অনূশীলনের মধ্য দিয়েই পালিত হয়।
রমজান মাসের রোজা সম্পর্কে “তৌরাত”গ্ৰন্থে বলা হয়েছে -রোজা রোজাদারদের পাপ ধ্বংস করে।”যবুর”গ্ৰন্থে বলা হয়েছে -রোজার মাধ্যমে মানুষ বিশ্বপ্রভূর নৈকট্য লাভ করে।”ইঞ্জিল”গ্ৰন্থে বলা হয়েছে -রোজা পালনে মানুষ পাপমুক্ত নির্মল হৃদয়ের অধিকারী হয়। পবিত্র “কোরান”গ্ৰন্থে বলা হয়েছে -রমজান ‘রমজ’ধাতু হতে উদ্ভূত।যা কোনো কিছু জ্বালিয়ে- পুড়িয়ে সোজা করে অর্থাৎ পূণ্যময় জীবন দান করে। তাই রোজা ঠিক মতো পালন করলে মাতৃগর্ভ থেকে ভূমিষ্ট শিশুর মতো নিষ্পাপ হওয়া যায়।
হাদিস শরিফের বর্ণনায় জানা যায় – মহান আল্লাহ তা’য়ালা বলেছেন “রোজা কেবল আমার সন্তুষ্টির জন্য এবং আমিই এর প্রকৃত প্রতিদান প্রদান করব”। মানুষের কু-প্রবৃত্তি বা ষড়রিপু দমন করার মাধ্যমই হচ্ছে “রোজা”। উল্লেখ্য, রমজান মাসের রোজার সুফল অত্যন্ত সুদুরপ্রসারী ও বিস্তৃত। রমজান মাসের রোজা আমাদের সকলকে ত্যাগ-সংযম-উদারতা-মানবতার পথে চালিত করে বলে জানিয়েছেন ইলামবাজার খুষ্টিগিরি দরগাহ্ শরীফের তত্ত্বাবধায়ক সৈয়দ শাহ্ হাফিজুর রহমান সাহেব।
ইসলামী ধর্ম গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে একটি অন্যতম পবিত্র কর্তব্য হচ্ছে রোজা পালন। এই মাসে বিশেষ নামাজ হিসেবে রয়েছে তারাবীহ নামাজ। যা প্রতিদিন রাতে এশার নামাজের সাথে আদায় করা হয়। নিজ নিজ পরিবারের ধনসম্পত্তির পরিমাণের বিশেষ মূল্য নির্ধারণ করে দিতে হয় জাকাত। যা অভাবগ্রস্ত, দুঃস্থ ব্যাক্তিদের সাহায্যার্থে দান করা বাধ্যতামূলক। উল্লেখ্য, একমাস রোজার শেষে আসে খুশির উৎসব ঈদ। সেই নামাজ আদায়ের আগেই বিতরণ হয়ে যায় জাকাত হিসেবে দান সামগ্রী। ঈদের নামাজের জন্য ঈদগাহ বা কারাবালা ময়দানে জমায়েত হয়ে একত্রে সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে আদায় করে ঈদের নামাজ। চলে কোলাকুলি, সালাম ও মিষ্টি মুখ পর্ব।
বিশ্বব্যাপী ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা তাই রোজার মাসকে কোরবানি বা ত্যাগের মাস হিসাবে বিবেচনা করে। ১২ মাস থাকলেও এই ক্যালেন্ডারে ৩৫৪ দিন রয়েছে। তাই প্রতি বছর রমজান মাস গ্রেগরীয়ন ক্যালেন্ডারের তুলনায় ১১ দিন এগিয়ে আসে। চাঁদ দেখার উপরই রমজানের শুরু এবং শেষ নির্ভরশীল। তাই আজ রোজার উপবাস শুরু হলেও খুশির ঈদে মিলিত হওয়ার অপেক্ষায় আরো একমাস।